বই উৎসব নিয়ে শঙ্কা
প্রতিবছর পাঠ্যপুস্তক উৎসব শুরু হয় জানুয়ারির প্রথম দিন। আগামী বছর আসতে বাকি আছে আর মাত্র ১০ দিন। এখনো সম্পন্ন হয়নি ছাপার কাজ। আট কোটির বেশি বই ছাপাতে এখন বাকি। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের সাড়ে ৬ কোটি আর প্রাথমিকের প্রায় দেড় কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ বাকি আছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এনসিটিবি থেকে জানা যায়, আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই। এর মধ্যে প্রাথমিকের প্রায় ১০ কোটি আর মাধ্যমিকের আছে ২৫ কোটি। গত রোববার পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০২টি বইয়ের মধ্যে মুদ্রণ শেষ হয়েছে ২ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৯২টি বই। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে ২ কোটি ৭৩ হাজার ৮৮৫টি। এ স্তরে বই পৌঁছানোর হার ৮১ শতাংশ।
আরও পড়ুন: মরমী কবি হাছন রাজার জন্মদিন আজ
সূত্র থেকে জানা যায়, বই ছাপা না হওয়ার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। প্রাথমিকে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার আর মাধ্যমিকে প্রায় ১৯ কোটি ছাপা হলেও তা সরবরাহে আরও কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। কেননা বই মুদ্রণের পর তা বাঁধাই, কাটিংসহ আরও কিছু পর্যায় বাকি থাকে। এরপর তা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়।
জানা গেছে, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৬ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৮টি বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৬ কোটি ২৫ লাখ ৮ হাজার ৬৫৫টি বই জেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ স্তরে বই পৌঁছানোর হার ৮৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: নির্যাতনে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর মৃত্যু, স্বামী কারাগারে
প্রাক-প্রাথমিকের ৬৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি নতুন বইয়ের মধ্যে মুদ্রণ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশের। সেসব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪টি বইয়ের শতভাগ মুদ্রণ শেষে পৌঁছেছে জেলা পর্যায়ে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকের বই ছাপানো বাকি রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬২টি।
অন্যদিকে মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ২০২টি বইয়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি বই। তার মধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে প্রায় ১৩ কোটি। এখনো সাড়ে ৬ কোটি ৭১ লাখের বেশি বই ছাপানো হয়নি। আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে এসব ছেপে জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
সূত্র থেকে আরও জানা যায়, তিনটি কারণে পাঠ্যবইয়ের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। প্রথমত, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এনসিটিবি যথাসময়ে মুদ্রণসংক্রান্ত কাজ শুরু করেনি। একই কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনে বিলম্ব হয়। এছাড়া এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দরপত্রের তফশিল তৈরিতে ভুল এবং দরদাতারা সিন্ডিকেট করায় বিভিন্ন কাজের দরপত্র একাধিকবার ডাকতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবির হল থেকে বহিষ্কার হলেন সেই ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত উল্লাহ
সূত্র জানায়, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে এবার ৩৪ লাখ শিক্ষার্থী আছে। এসব শিক্ষার্থীকে সরকার অনুশীলন গ্রন্থ বা হাতের লেখার খাতা ‘এসো লিখতে শিখি’ এবং পাঠ্য ‘আমার বই’ দিয়ে থাকে। দরপত্রের তফশিল তৈরিকালে এনসিটিবি ভুল করে কাগজের ক্ষেত্রে অবাস্তব শর্ত আরোপ করে। ওই কাগজ কোথাও নেই। নিজেদের ভুল ঢাকতে সংস্থাটি নতুন করে দরপত্র ডাকে। এ কারণে দ্বিতীয়বার ৮ ডিসেম্বর এই স্তরের পাঠ্যবইটি ছাপতে দেয়। ফলে খাতা চলে গেলেও আটকে গেছে বইটি।
সূত্র থেকে জানা গেছে, গত রোববার ৬৩ লাখ বইয়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই হারে কাজ চললে আগামী ১ জানুয়ারির দুদিন আগেই মুদ্রণকাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর সবশেষে দরপত্র হলেও আগামী শনিবারের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের অর্ধেক বই পাওয়া যাবে।
এ বিষয় এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিবছরই বই ছাপানোয় সংকটের কথা বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তা পেয়ে যায়। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। কাজ শেষ করার বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনো মূল্যে কাজ শেষ করা হবে।