ইঁদুরের গর্তে শিশুদের হানা!
আমন ধান কাটা শেষ। এসময় ধানক্ষেতে ভিড় করছে শিশু-কিশোররা। লক্ষ্য একটাই ইঁদুরের গর্ত খুঁজে বের করা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এসব শিশুরা প্রতিদিন সকাল হলেই দলবেঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠে। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের শিষ সংগ্রহ করে তারা।
ধান কাটার পর ক্ষেতে অবশিষ্ট পড়ে থাকা ধান কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুরা এবং ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের শিষ সংগ্রহ করে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ কেজির মতো ধান পায় তারা। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করে, কেউ আবার সে ধান মজুদ করে রাখে নিজেদের জন্য।
দেখা গেছে, ধানক্ষেতে শিশু-কিশোররা খুঁজে বেড়াচ্ছে ইঁদুরের গর্ত। কারও হাতে কোদাল, দা আর খোন্তা। অবার কারও হাতে আছে ব্যাগ। আমন ক্ষেত থেকে ফসল তোলার পর ইঁদুরের জমানো ধানে ভাগ বসাচ্ছে ওরা। এছাড়া ক্ষেতে পড়ে থাকা ধানের শীষের মালিকানাও ওইসব শিশু কিশোরদের।
পটুয়াখালী জেলার কলাপড়া উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে এ দৃশ্য। প্রতিদিনই ধান কুড়াচ্ছে শিশুরা। দল বেঁধে ছুটে চলছে ফসলের মাঠে। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। ইঁদুরের গর্ত কিংবা ঝরে পড়া ধান দেখলেই ওদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে সোনালি হাসি।
আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া রুমানার বাড়িতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
স্থানীয়রা জানান, রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধানের ক্ষেতে ভিড় করে ছোট ছোট শিশুর দল। ধান কাটার পরে নাড়ার সঙ্গে দুই এক গোছা ধান থাকলে সেগুলো কুড়িয়ে নেয় ওরা। শুধু তাই নয় গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অনেকেই করছেন এই কাজ। আমন ধান কাটার এ মৌসুমে অনেক শিশু কিশোর স্কুলে না গিয়ে দিন পার করছে ফসলের মাঠে ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহে।
গ্রামে ক্ষেতে পরিত্যক্ত ধান কুড়াতে ব্যস্ত ছোট্ট শিশু রোহান। তার সারা গায়ে লেগে আছে কাদা মাটির ছোপ ছোপ দাগ। আর এর একটু পাশেই কয়েকটি শিশু দীর্ঘক্ষণ ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান উদ্ধারে চেষ্টা করছে। শিশুরা জানায়, মালিকরা ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে, সেগুলো আমরা কুড়িয়ে নিই। এছাড়াও ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ ধান। এসব ধান আমরা বাড়িতে জমা করে রাখি। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করি।
স্থানীয় প্রবীণ কৃষক জানায়, আগেকার সময়ে মাঠ ভরে যেত ধান কুড়ানি শিশুদের আনাগোনায়। তখনকার সময়ে ধান কাটার একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। এখন সবকিছু পাল্টে গেছে। অনেক শিশুকে এখন মাঠে দেখা যাচ্ছে। তারা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করে।
আরও পড়ুন: আছপিয়ার জন্য অনশনে বসার ঘোষণা নির্মলেন্দু গুণের
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এসব শিশু-কিশোররা মাটি খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যস্ত থাকে।
তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা মো: জালাল উদ্দীন খান জানান, ক্ষেত থেকে ইঁদুর ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপৎকালীন খাদ্য হিসেবে গর্তে মজুদ রাখে। আর ওইসব শিশু-কিশোর সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে। তবে এতে ঝুঁকিও রয়েছে। গর্তে বিষধর সাপ থাকতে পারে। তবে এ ধান কাটার মৌসুমকে ঘিরে এ কাজের সঙ্গে অভাবী পরিবারের লোকজনও জড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানান, ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান বের করা, এটা নিরাপদ নয়। গর্তে সাপ থাকতে পারে। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষকরা ক্ষেতের ধান কাটলে মাঠে ধান পড়ে থাকবে না। এতে কৃষকরাও উপকৃত হবে। এছাড়া ইঁদুর নিধনের জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।