ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, থানায় রয়েছে লাইব্রেরী
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে। হাজতে কয়েদিদের জন্য রেলওয়ে পুলিশ স্টেশনে লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রবিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মো. মাজহারুল হক জানিয়েছেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে থানার সংস্কার কাজ করার পর হাজতখানায় এই লাইব্রেরী সংযোজিত হয়েছে। পাশাপাশি থানায় লাইব্রেরী থাকার বিষয়টিকে তিনি একটি ব্যাতিক্রম উদাহরণ বলেও বর্ণনা করেছেন।
একটা সুন্দর পরিবেশই পারে অপরাধীর ভেতর মানবিকতাবোধ জাগিয়ে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে- এমন চিন্তা থেকেই থানার সংস্কার কাজ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন।
জানা গেছে, এই থানার হাজতখানার একটি দেয়ালে লেখা আছে উৎসাহ জাগানো কবিতার কিছু লাইন, তার নিচেই তাকের মধ্যে সাজানো গোটা পঞ্চাশেক বই। ভেতরটাও বেশ পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন।
তবে, আধুনিকায়নের পর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি জানিয়ে রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল হক বলেন, ‘প্রতিনিয়তই হাজতখানাটিকে সংস্কার করা হচ্ছে।’
ওসি মাজহারুল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘এখানে যারা আসামি হিসেবে আসেন, তাদের আমরা শুধুমাত্র আসামি হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি। একজন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার, আমরা সেভাবেই রাখার চেষ্টা করি। এইরকম একটা পরিবেশে এসে, দেখে, থেকে একজন অপরাধীর মনে আপনা থেকেই ভাল চিন্তা জেগে উঠবে।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সে ভাববে, অপরাধ করার পরেও আমাকে এত সুন্দর একটা পরিবেশ দেওয়া হয়েছে, আমি কেন অপরাধ করব? এমন চিন্তা থেকেই গত পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে থানাটির আধুনিকায়নের কাজ হয়।’
শনিবার হাজতখানার ভেতরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পুতুলনাচের ইতিকথাসহ ধর্মীয় নীতিমূলক বেশ কিছু বই দেখতে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের বই সংগ্রহের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘সামনে এটা নিয়ে আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে। আমাদের এইখানে জায়গা তেমন বেশি না। অল্প জায়গার মধ্যেই আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি।’
এদিকে, এই থানায় কী ধরনের মামলার আসামিরা বন্দি থাকেন জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, ‘খুব বড় ধরনের মামলার আসামিদের এই হাজতখানায় রাখা হয় না। রেলওয়েতে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো অপরাধে হওয়া মামলার আসামিদের এইখানে এনে রাখা হয় এবং একদিনের বেশি এখানে রাখা হয় না।’
রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা রেলওয়ে থানায় বর্তমানে চার থেকে পাঁচজন বন্দি সহজেই থাকতে পারেন। কর্তৃপক্ষের চেষ্টা থাকলে ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো যাবে।