১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০:০১

এখনও খুনি এরশাদ শিকদারের নামে চলছে স্কুল

এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়  © সংগৃহীত

খুলনার একসময়ের আতঙ্ক এরশাদ শিকদারের নামে এখনও চলছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এরশাদ শিকদারের ঘাট হিসেবে পরিচিত নগরীর ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে সে। রেলওয়ের ৪৯ শতক জমির ওপর নির্মিত বিদ্যালয়টির নাম দেওয়া হয় 'এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়'। ২০০৪ সালের ১০ মে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর হলেও বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করা হয়নি।

গত বছর স্কুলের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয় বলছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত নাম ‘ভৈরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তবে এক বছর ধরে প্রস্তাবটি সদর থানা শিক্ষা অফিস থেকে জেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছায়নি। 

এই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের তিনটি কক্ষই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একটি কক্ষে শিক্ষকরা বসছেন, আরেকটিতে চলছে রং করার কাজ। অন্য কক্ষে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আলী শেখ বলেন, এরশাদ শিকদার ১৯৮৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। রেলওয়ের ৪৯ শতক জমি এনওসি নিয়ে নির্মিত বিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয় ‘এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি বেসরকারি রেজিস্টার্ড বিদ্যালয় হিসেবে এটি অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়।

গত বছর বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রস্তাবিত নাম ‘ভৈরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তবে করোনার কারণে এটার কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন।

খুলনার সদর থানার শিক্ষা কমকর্তা শেখ মো. নুরুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে তাদের কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। ফাইলটি যার কাছে ছিল তিনিও সম্প্রতি অবসরে গেছেন।

জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌহা বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বির্তকিত নাম পরিবর্তনের জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। স্কুল কমিটি রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রস্তাবনা করবেন। এরপর আমরা জেলা কমিটিতে অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এখানে তেমন কোনো খরচ বা ঝামেলা নেই। স্কুলটি অবশ্যই বিতর্কিত নামে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জানা গেছে, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি নলছিটি থেকে খুলনায় আসেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে ‘রামদা বাহিনী’ নামে একটি দল গড়ে খুলনা রেলস্টেশন ও ঘাট এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন।

১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার হন এরশাদ শিকদার। তখন তার নামে ৪৩টি মামলার বিচার চলছিল। যার অধিকাংশই ছিল হত্যা মামলা। নিম্ন আদালতের বিচারের পর সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসি ও চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।