১৫ দিনের দুধের শিশু নিয়ে পরীক্ষা দিলেন মা
সরকারি শরোনখোলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ১৫ দিন বয়সি নবজাতককে রেখে পরীক্ষা দিচ্ছেন সরকারি সিরাজউদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের এক ছাত্রী। ১৩ নভেম্বর বেলা ৯ টায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সরকারী সিরাজউদ্দিন মোমোরিয়াল কলেজের অনার্স বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রায়েন্দা শরোনখোলা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে অনার্স ১ম বর্ষের পরিক্ষায় অংশ নিতে দেখা যায়।
কেন্দ্রের পাশের এক বাসায় সদ্য জন্ম নেয়া দুধের শিশুকে আত্মীয়ের কাছে রেখেই পরীক্ষা দিচ্ছেন মা। পরিক্ষা কেন্দ্রের গেটে নবজাতককে নিয়ে বসে আছেন এক মধ্য বয়সী নারী। এখানে নবজাতক কেন-জানতে চাইলে তিনি জানান, ওর মা পরীক্ষা দিচ্ছে। আর আমি নবজাতকের আত্মীয়। শিশুটির বয়স মাত্র ১৫ দিন।
উৎসুক মনে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে দায়ীত্বরত শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতেই সেই মায়ের খোঁজ মিলল। নাম তার শাহানাজ আক্তার।
জানা যায়, ১ নভেম্বর ভোর ৪টায় শাহানাজ আক্তারের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক মেয়ে। একদিকে প্রথম সন্তান, প্রথম মাতৃত্বের অনুভূতি। অন্যদিকে পরীক্ষা না দিলে পুরো এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার চিন্তা। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না এই শিক্ষার্থী। অবশেষে ঝুঁকি নিয়েই সদ্য জন্ম নেয়া দুধের সন্তানকে আত্মীয়ের কোলে রেখেই চলে আসেন পরীক্ষা দিতে। সন্তান ছিল তার ভাবির কোলে। সেদিন অনার্স বিভাগের প্রথম বর্ষের বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সংস্কৃতি পত্রের পরীক্ষা ছিল তার ।
এভাবে ১৫ দিন বয়সী শিশুকে রেখে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কলেজের অধ্যক্ষ অনেক খুশি হন। পড়াশোনার প্রতি শাহানাজের একাগ্রতা দেখে সবাই তার প্রশংসা করেন। শাহানাজ সরকারি সিরাজউদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী। মোরেলগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ মাইল দুরবর্তী কলেজ রায়েন্দা সরকারি শরোনখোলা কলেজে তারা সবাই পরীক্ষা দেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে শাহানাজের স্বামী বলেন স্ত্রী ও সন্তানের জীবনের বিষয়টি চিন্তা করে তাকে অনেক নিষেধ করেছি যেন এ পরীক্ষাটা না দেয়। কিন্তু শাহানাজ কথা শুনেনি।
শাহানাজ আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার পরবর্তী পরীক্ষা ১৮ নভেম্বর । আজকে আমি যদি সাহস করে পরীক্ষাটা না দিতাম তাহলে একটা বছর পিছিয়ে যেতাম।
পরীক্ষা কক্ষের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক জানান, শাহানাজ আক্তার যে সাহস করে পরীক্ষা দিয়েছেন তাকে আমি সাধুবাদ জানাই।
সরকারি সিরাজউদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান প্রবীর কুমার নাথ বলেন, ১৫ দিন বয়সী শিশুকে রেখে শাহানাজ যে পরীক্ষা দিচ্ছেন, তা আমি জানতাম না। শাহানাজের স্বামী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তার সাহস ও শিক্ষার প্রতি ভালবাসা দেখে আমি খুশি হয়েছি।