এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করলো পাষণ্ড স্বামী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৪:১২ PM , আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৪:১৮ PM
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে স্বামীর নির্মম নির্যাতন ও ধারালো বঁটির এলোপাতাড়ি আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে এখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ধারালো বঁটির আঘাতে গুরুতর হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বোন ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার সুমি ও মা নাছিমা আক্তার।
শুক্রবার (১২ই নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া এলাকায় এই লোহমর্ষক ঘটনাটি ঘটে। হামলার শিকার তিনজনের হাত, মাথা ও গলায় অন্তত ১৫-২০ টি বঁটির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে জানা গেছে।
তবে কী কারণে এই ঘটনার সূত্রপাত সে বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু বলতে পারেনি হামলার শিকার হওয়াদের কেউ।
উপজেলার গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের। কিন্তু মাস ছয়েক আগে সাইফুল ইসলাম নামের যে যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল সেই স্বামীর নির্মম নির্যাতন ও ধারালো বঁটির এলোপাতাড়ি আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে এখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মেয়েটি।
প্রতিবেশী রবিন মিয়া জানান, ভোর বেলা চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনে সুমাইয়াদের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি সুমাইয়া, সুমি ও তাদের মা নাছিমা আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এরপর পুলিশের সহায়তায় তাদেরকে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঘটনাস্থল থেকে সাইফুলকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
হামলার শিকার আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়ার নানী জয়নব বলেন, রাতে সাইফুল ও সুমাইয়া এক ঘরে ছিল। আমি, সিমু ও সিমুর মা (নাছিমা) আরেক ঘরে ছিলাম। ভোর বেলা সুমাইয়ার ডাক চিৎকারে প্রথমে নাছিমা ও পরে সিমু এগিয়ে গেলে সাইফুল ওদের দুজনকে বঁটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপায়। সুমাইয়ার গোপনাঙ্গে সাইফুল প্রথমে নির্যাতন করে। এরপর বঁটি দিয়ে সুমাইয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো আঘাত করেছে বলে জানতে পারি। গত রোববার থেকে সাইফুল তাদের বাড়িতে ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬-৭ মাস পূর্বে উপজেলার বাশতৈল ইউনিয়নের আমরাতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে সাউথ আফ্রিকা ফেরত সাইফুল ইসলামের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বিয়ের পর সুমাইয়া ৩ মাসের মতো সেখানে ছিল। এরপর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য গত ৩ মাস যাবৎ নিজেদের বাড়ি সোহাগপাড়াতে ছিল। মাঝে মাঝে সাইফুল সুমাইয়াদের বাড়িতে আসতো। তবে দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর সাউথ আফ্রিকা থেকে উপার্জিত অর্থের হিসাব নিয়ে সাইফুলের বাবার সাথে সাইফুলের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিলনা বলে জানা গেছে। এমনকি বিয়ের পর থেকে সাইফুল তার স্ত্রী ভরণ-পোষণ করতেও ব্যর্থ হচ্ছিল বলে জানা গেছে।
স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার্থী সুমাইয়ার বিচ্ছিন্ন হওয়া কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি ডাক্তাররা চেষ্টা করেও জোড়া লাগাতে পারেননি। অপরদিকে সুমাইয়ার মা নাছিমা আক্তারের হাতের রগ কেটে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে দেওহাটা ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক আইয়ুব খান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমরা সাইফুল ইসলামকে আটক করেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তা এখনো অস্পষ্ট।