প্রেম ভাঙতে গিয়ে কলেজছাত্রী ছিনতায়ের নাটক, অতঃপর...
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী সামাজিক বনায়ন এলাকায় ঘুরতে আসে প্রেমিক-প্রেমিক। প্রেমিকার উদ্দেশ্য প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক না রাখা। এর জন্য নিয়ে ছিল নিজের বাল্যবন্ধুর সহযোগিতায় ছিনতাই নাটক সাজিয়ে প্রেমিককে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করেন কলেজছাত্রী। তবে ঘটনাস্থলে সত্যিকারের ছিনতাইকারীর উপস্থিতিতে ভণ্ডুল হয়ে যায় পরিকল্পনা।
এ সময় ছিনতাইকারী-শিক্ষার্থী মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামের এক ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সামাজিক বনায়ন এলাকায় বহিরাগত এক প্রেমিক যুগল ঘুরতে আসলে তাদেরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী থেকে জানা গেছে, সোমবার বিকাল ৩টার দিকে সামাজিক বনায়নে ঘুরতে আসেন মুন্সীগঞ্জের বাহরাইন প্রবাসী রাসেল দেওয়ান ও কুমিল্লার চান্দিনার এক ছাত্রী। তাদের দুইজনের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে সম্পর্কের অবনতি হলে ওই ছাত্রী রাসেলকে কুমিল্লায় এসে দেখা করতে বলেন।
রাসেল মুন্সীগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় আসলে তাকে সামাজিক বনায়নে নিয়ে আসেন ওই ছাত্রী। এদিকে ওই ছাত্রী তার ছোটবেলার বন্ধু আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলামকে নিয়ে রাসেলকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুসারে আজহার ও তার বন্ধু কুবির আইসিটি বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এমএইচ সাকিবসহ ৭-৮ জন রাসেলের ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন।
এ সময় সালমানপুর এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী টারজান গ্রুপের সদস্য ইকবাল হোসেন, নয়ন, মিজান ও আলাউদ্দিন এসে আবার শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত রাসেলের মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেন। এ সময় বাঁশ, লাঠি দিয়ে তাদের মারধরও করে এ ছিনতাইকারীরা।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে টারজান ইকবাল ও আলাউদ্দিনকে গণধোলাই দিয়ে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এদিকে রাসেল ও ওই ছাত্রীকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ইকবালকে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে বাহরাইন প্রবাসী রাসেল বলেন, আমাদের ৫-৬ বছরের সম্পর্ক। আমাদের দুই ফ্যামিলি বিষয়টি জানতো। কিন্তু কেন এমন ঘটনা করলো বুঝতে পারছি না।
অভিযুক্ত আজহার ওই ছাত্রীর বিষয়ে বলেন, মেয়েটি আমার বাল্যবন্ধু। সে আমাকে তার প্রেমিকের আসার কথা বলে নিয়ে আসেন। এত বড় ঘটনা হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।
ছিনতাইকারী ইকবাল বলেন, কয়েকজন মিলে ছেলে ও মেয়েকে মারধর করতেছে দেখে আমি, নয়ন, মিজান তাদের বাঁচাতে ছুটে আসি। হাতে গাছ নিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করি। আমি কোনো মোবাইল নেইনি।
এ বিষয়ে কোটবাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা একজন ছিনতাইকারী আটক করেছে শুনে আমি যাই। আটক ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে পূর্বেও অভিযোগ ছিল। আমরা তাকে থানায় প্রেরণ করেছি। তার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যান্যদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, আটককৃত ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর জড়িত বিষয়ে তিনি বলেন, সে যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থী। ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করা হবে।