১৬ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০৩

বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ ভয়াবহ দরিদ্রতার সঙ্গে বাস করছে  © সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিপর্যয় আর খাদ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যে আজ ১৬ অক্টোবর (শনিবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবস।

বিশ্ব খাদ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ— ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন’।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২১’।

মহামারীর এই সংকটকালে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট আরও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা দা হাঙ্গার প্রজেক্টের তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ ভয়াবহ দরিদ্রতার সঙ্গে বাস করছে, আর ৮৫ কোটি মানুষ দরিদ্রতার ঝুঁকিতে আছে কোভিডের কারণে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী।

খাদ্যের আন্তর্জাতিক বড় প্রতিষ্ঠান ক্রাফট হেইনজ সতর্ক করে বলেছে যে, মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি আর মুদ্রাস্ফীতির কারণে ‘খাদ্যের উচ্চমূল্যের সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে’।

দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীও প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অন্তত চার কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য দ্রুত তহবিল গঠনের আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

খাদ্য নিরাপত্তার বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবেলা নিয়ে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) মহাপরিচালক বলছেন, কৃষি খাদ্য পদ্ধতিতে সহায়তা, দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এবং নষ্ট করার মতো কোন সময়ই এখন নেই।

তিনি বলেছেন, জলবায়ু সহনশীল কৃষির ব্যবস্থা করা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পানির স্বল্পতা দূর করা, বীজ ও অন্য দরকারি কাঁচামালের দাম কমানো এবং নিজের জন্য শস্য রাখতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পৃথক বাণী:

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতার পথ ধরেই গ্রামীণ ও কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃষি অন্তপ্রাণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি কৃষির উন্নয়নে কৃষকদের মাঝে খাস জমি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। জাতির পিতা গ্রামীণ ও কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে যে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আবদুল হামিদ বলেন, সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপে দেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফল, সবজির উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে উৎপাদিত মাছ এবং মাংস উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিপণ্যে রফতানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের এ সব উদ্যোগ দেশের কৃষি উৎপাদনকে আরো বেগবান করার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। বাণীতে তিনি বিশ্ব খাদ্য দিবসের সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সরকার মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমে দানাদার খাদ্য, মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে আমাদের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়ে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১২ বছরে কৃষি উন্নয়নে কৃষিবান্ধব ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে তার সরকার কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প-২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, নিরাপদ খাদ্য আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ সহ উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কৃষির উন্নয়নে কৃষকদের জন্য সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ ও কৃষিযান্ত্রিকীকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং কৃষি প্রণোদনা/কৃষি পুনর্বাসন, কৃষিঋণ, কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ই-কৃষির প্রবর্তন, জলবায়ু ও ঝুঁকি সহনশীল ফসলের জাত/প্রযুক্তি উদ্ভাবন ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কৃষি শিক্ষা-গবেষণা খাতেও বরাদ্দ বেড়েছে। যার ধারাবাহিকতায় খোরপোশের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।

দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে কৃষিনির্ভর শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।