১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক’র নিন্দা
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’র ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে লাঞ্চিত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক’।
গত সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় এই ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের শিক্ষক সহকারী প্রক্টর রাজিব অধিকারী ও জান্নাতুল ফেরদৌস মুনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান কিংবা কোন আইনেই একজন নাগরিকের চুল কিংবা পরিচ্ছদের উপর কোনরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি৷ বরং সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’’
৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’’
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৩৪১ ধারা অনুসারে ব্যক্তির স্বাধীন চলাচলে হস্তক্ষেপ ও বাধা প্রদানকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়।
অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গরাই দেশের সংবিধান ও আইনের তোয়াক্কা না করে ১৪ জন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, শারিরিক-মানসিকভাবে লাঞ্চিত করা ও সামাজিক মর্যাদাহানির মত নেক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন৷ উপরন্তু এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে বহিষ্কারের হুমকি প্রদান করেন সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন৷ যার জের ধরে তুহিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ ফলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার মত অপরাধও এখানে সংগঠিত হয়েছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এমন নেক্কারজনক আচরণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়৷ সামগ্রিকভাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে দুর্বৃত্তপনা, অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও প্রশাসনের অবাধ স্বেচ্ছাচারীতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ এই ঘটনা৷ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বহিষ্কার, শোকজ, নিপিড়ন, মোরাল পুলিশিং এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে৷ এর বিরুদ্ধে সচেতন প্রতিরোধ তৈরি করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়৷
বিবৃতিতে অবিলম্বে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শিক্ষার্থীকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিদের স্থায়ী বহিষ্কার, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি এই অগণতান্ত্রিক পরিবেশের বিরুদ্ধে সারাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়৷