বাবার সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন জবির প্রাক্তন ছাত্র রায়হান (ভিডিও)
বাবাকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে একটি হোটেলে ঢুকলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রাক্তন ছাত্র রায়হান হাসনাত চৌধুরী (৩৬)। বসলেন মুখোমুখি। খাওয়া-দাওয়া শেষও করলেন। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই খাবার টেবিলের চেয়ার থেকে ঢলে পড়লেন তিনি।
মেঝেতে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাবার সামনে মারা গেলেন ছেলে রায়হান। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটে রাজধানীর মহাখালীর একটি রেস্তোরাঁয়। রায়হান জবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের বিবিএর ছাত্র ছিলেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে সহপাঠী ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রায়হানের বন্ধু রেদওয়ান আতিক জানান, রায়হানের বাবা ঢাকার নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কাজে বুধবার তিনি গিয়েছিলেন গুলশানে। ছেলে রায়হান চাকরি করতেন মহাখালীর নিটল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে। মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বেশ ব্যস্ততায় ছিলেন রায়হান।
বাবা গুলশান আসছেন জানতে পেরে দুপুরের খাবার একসঙ্গে খেতে বলেন ছেলে। সায় দিয়ে ছেলের সঙ্গে খেতে যান বাবা। দুজনে একসঙ্গে ঢোকেন মহাখালীর একটি হোটেলে। খাওয়া শেষের পর হঠাৎ বসা থেকে কাত হয়ে হোটেলের মেঝেতে পড়ে যান রায়হান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
রায়হান হাসনাত চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায়। যাত্রাবাড়ীর সুরুজনগর কলোনির নিজ বাড়িতে থাকতেন। তার বাবার নাম আবুল হাসনাত চৌধুরী।
ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেন রায়হান। দেশের বাইরে থেকে করেন এমবিএ। নিটোল মটরসে তার চাকরির বয়স ১২ বছর। তার স্ত্রীর নাম রোমানা সরকার। তাদের সংসারে ১৬ মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
রায়হানের সহপাঠী এম মামুন হোসেন বলেন, মাত্র ৩৬ বছর বয়স। বুধবার দুপুরে বাপ-বেটা একসঙ্গে খেয়েছে। ১ সেকেন্ড সময়। সব শেষ। সময়ে পেছনে ফিরে যাওয়া যায় না। কত কথা জমা থাকে। ওর ১৬ মাস বয়সী মেয়ের মুখে ‘বা.. বা’ বোল ফুটেছে। মেয়েটা কাকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরবে। মা.. অবুঝ মা আমার এই শোক নিয়ে তুমি অনেক বড় হও। তোমার নামে পৃথিবী মনে রাখুক আমার বন্ধুকে।
বুধবার রাতে নামাজে জানাজা শেষে রায়হানকে বায়তুল আমান জামে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আজ শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর একই মসজিদে এবং গ্রামের বাড়িতে মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে।