সব স্কুল-কলেজ বন্ধে সরকারকে নোটিশ, আইনজীবীকে ভৎসনা

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয়
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয়  © সংগহীত

করোনা মহামারি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিবসহ ছয় জনকে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ নোটিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর থেকে এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু সংখ্যক ব্যবহারকারী আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ারকে সমর্থন করলেও অধিকাংশই তার এ কাজকে ভৎসনা করেছেন।

এর আগে, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয়। তবে স্কুল-কলেজে শ্রেণি পাঠদান শুরু হলেও এখনো বন্ধই রয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়।

আইনজীবী খন্দকার শাহরিয়ার আলমের ছবি যুক্ত করে সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সায়েদ আবু ইউসূফ লিখেছেন, এই সেই আইনজীবী! যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য আইনি নোটিশ দিয়েছে।

তিনি লিখেন, এ আইনজীবীর অনেক টাকা, সে চাইলে তার সন্তানদের যেকোনোভাবে পড়ালেখা করাতে পারেন। কিন্তু তার মতো তো আর সবার বস্তা বস্তা টাকা নাই যে, স্কুল-কলেজ বছর বছর বন্ধ থাকলেও সবাই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে। সে একজন দেশদ্রোহী। সে জাতির পেটে লাথি দেবে এটা জাতি কখনো মেনে নেবে না।

নোটিশে করোনাকালীন পুরো সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যৌথ কমিটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে শতভাগ ক্লাস নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

একইসঙ্গে নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

খন্দকার হাসান শাহরিয়ারের সমালোচনা করে জিল্লুর রহমান জিয়ন নামে একজন শিক্ষার্থী লিখেছেন, এগুলো পরিচিতি পাওয়ার ধান্ধা। না হলে এখন পাগলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে কথা বলে...।

সাউথ ওয়েস্ট সালেহ আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আকমল হোসাইন আবির লিখেছেন, করোনা চিরতরে নির্মূল না হওয়ার আগ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আইনি নোটিশ দিয়েছেন, কাল যদি আপনি রাস্তায় দুর্ঘটনায় মারা যান তখন কি হবে? নাকি আবার সড়ক দুর্ঘটনা চিরতরে বন্ধ না হওয়ার আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আইনি নোটিশ পাঠাবেন?

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সেলিম লিখেছেন, এসব আইনজীবীরাই বাংলাদেশকে ডুবাবে। তাদের কারণেই আজ দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখার দিক থেকে বিশ্বে নাম্বার ওয়ান হয়েছে।

তবে এতো এতো সমালোচনার মাঝেও কিছু ব্যবহারকারী খন্দকার হাসান শাহরিয়ারের পক্ষ নিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘‘করোনা ঝুঁকি মাথায় রেখেই এখনো বিশ্ববিদ্যায়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তাদের টিকা দিয়ে খোলা হবে। স্কুল-কলেজের বাচ্চাদেরও এভাবে আগে টিকা নিশ্চিত করা উচিৎ ছিল।’’

এদিকে, কোন ধরনের আলোচনা-সমালোচনায় কান দিতে চান না বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।

তিনি বলেন, আমরা নোটিশের ফিডব্যাকের অপেক্ষা করছি। কে কি বললো সেটি তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে যেটি উত্তম মনে করেছি সেটিই করেছি। দেশের মানুষ কখনো কোন বিষয়ে এক মত হতে পারেনি। আমরা নির্ধারিত সাত দিনের পর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।


সর্বশেষ সংবাদ