হাসি ফুটেছে টিউশনি করানো শিক্ষার্থীদের মুখে

স্কুল-কলেজ খোলার সাথে সাথে টিউশনের চাহিদাও বেড়েছে
স্কুল-কলেজ খোলার সাথে সাথে টিউশনের চাহিদাও বেড়েছে  © সংগহীত

দীর্ঘ বিরতির পর দেশে স্কুল-কলেজগুলো খুলেছে। শ্রেণীকক্ষে নিয়ম করে চলছে পাঠদানও। নতুন উদ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে টিউশনির বাজারও চাঙ্গা হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য অভিজ্ঞ টিউটর খুঁজছেন। অন্যদিকে টিউটররা ভালো মাইনের টিউশনগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা বলছেন, করোনার ছুটির পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণী পাঠদান শুরু সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদাও বেড়ছে।

করোনার আগে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। করোনার বন্ধের শুরুতে তার হাতে থাকা ৩টি টিউশন চললেও ছুটি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউশনগুলোও বন্ধ হতে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই ঢাকায় চলে এসেছি। হল বন্ধ থাকায় একটি ভাড়া করা বাসায় উঠেছি। আমি আজিমপুর এবং নীলক্ষেত এলাকায় টিউশন করাতাম। এতোদিন আমার শিক্ষার্থীদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ না হলেও স্কুল-কলেজ খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অভিভাবকরা আমাদের খোঁজ করছেন।

পড়ুন: করোনা-কালে বদলে গেছে টিউশনের ধরন

তিনি বলেন, আমার একাধিক বন্ধুর এভাবে টিউশন করেই পড়াশোনার খরচ চালাতো। করোনার বন্ধে টিউশনগুলোও চলে যেতে থাকলে আমরা এক প্রকার নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আগের থেকে বেশি সম্মানি হলেও তারা আমাদের রাখার জন্যে কথা বলছেন।

করোনার বন্ধের আগে ইডেন কলেজের দুই ছাত্রীকে পড়াতেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এহসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় থাকলেও করোনার শুরুতে আমার টিউশনগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এখন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। আগামীকাল থেকে নিয়মিতভাবে যাওয়ার জন্য বলেছেন।

তবে জাহিদুল-এহসানদের টিউশন বন্ধ হয়ে গেলেও করোনার বন্ধে ভিডিও কলে টিউশন চালিয়ে নিয়েছেন ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসির দুই শিক্ষার্থীকে আমি করোনার আগ থেকে পড়াতাম। পরে করোনা শুরু হলে অভিভাবকরা বাসায় আসার পরিবর্তে ভিডিও কলে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি সেভাবে চালিয়ে নিয়েছি। আসলে এ সময়টাতে পড়াশোনার চাইতে যোগাযোগটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনার বন্ধে আসলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার তেমন চাপ ছিল না। এজন্য তারা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করতেন। তবে কিছু কিছু অভিভাবক ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের জন্য টিউটর রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু যারা বাদ করে দিয়েছেন স্কুল-কলেজ খোলার সঙ্গে সঙ্গে তারাও নতুন করে আবার টিউটর খোঁজা শুরু করেছেন।

কলাবাগান এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা চৌধুরী আশিকুর রহমান তার দুই ছেলের জন্য টিউটর রেখে বাসায় পড়াতেন। করোনার শুরুতে তাদের টিউটরকে নিষেধ করার পর থেকে তিনি নিজেই ছেলেদের দেখাশোনা করেছেন। এখন তিনি নতুন করে আবার টিউটর খুঁজছেন।

তিনি বলেন, আমি আমার ছেলেদের আগের টিউটরের সাথে যোগযোগ করেছি। সে আন্তরিকতার সাথে পড়াতো। কিন্তু করোনার শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে টিউশন বন্ধ করে দিয়ে নিজেই ছেলেদের দেখাশোনা করেছি। এখন স্কুল-কলেজ খুলছে। আমিও ছেলেদের আগের টিউটরের সাথে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তাকে আর পাচ্ছি না। নতুন করে কারো সাথে যোগাযোগ করলে তারা অনেক ডিমান্ড দেখাচ্ছে। অনেক টাকা বাজেট করেও মন মত টিউটর মিলছে না।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন দিয়ে থাকেন রাজধানীর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা টিউশন’। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মারুফুল আলম বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার সাথে সাথে টিউশনের চাহিদা অনেক বেড়েছে কথাটা সত্য। টিউশন হারিয়ে গ্রামে চলে যাওয়া অনেক টিউটর এখনো বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় আসতে না পারায় কিছুটা এমন হচ্ছে।

তিনি বলেন, টিউশন করানো অধিকাংশ শিক্ষার্থী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ায় তারা এখনো ঢাকায় আসছে না। স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বন্ধই রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এ চাপ কমে আসবে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী তুলনায় টিউটর সংখ্যা কম হওয়ায় বাজেটটা একটু বেশি হচ্ছে। তবে অভিভাবকরা এসব দেখছে না। বাচ্চাদের পরীক্ষা সামনে রেখে যেকোন মূল্যে তারা শ্রেণী পাঠদানের বাইরে বাসায় দেখাশোনার জন্য টিউটর চাচ্ছেন।


সর্বশেষ সংবাদ