‘ডিজিটাল আইনের নামে লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে’

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমাবেশ
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সমাবেশ  © টিডিসি ফটো

বর্তমান সরকারের তৈরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থী আইন বলে মন্তব্য করেছেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন। এ আইনের মাধ্যমে সরকার জনগণকে নিরাপত্তা দেয় না বরং লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা দেয় বলে কর্মসূচি থেকে অভিযোগ করা হয়।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুনামগঞ্জের শাল্লার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কারাবন্দী ঝুমন দাশের মুক্তির দাবিতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সমাবেশটির আয়োজন করে।

সমাবেশে অবিলম্বে ঝুমন দাশের মুক্তির দাবিতে সভাপতির বক্তব্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন একটি অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থী আইন। সুতরাং এই আইন বাতিল করতে হবে। আজকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে যে আইন করা হয়েছে তা আসলে জনগণকে নিরাপত্তা দেয় না বরং এই সিকিউরিটি অ্যাক্ট লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা দেয় যারা ক্ষমতার মসনদে বসে মানুষের উপর দঁড়ি ঘুরায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে যে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের শুধু এই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে যে তারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতেন।’

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী ইকরাম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী ধর্মীয় উন্মাদ মামুনুল গংদের বিরুদ্ধে ছোট্ট একটা কথা লিখার কারণে একজন দেশপ্রেমিক তরুণকে ছ'মাসের উপরে কারাবন্দী থাকতে হচ্ছে। তাহলে এই সরকার কীভাবে গণতান্ত্রিক সরকারের দাবি করে? এই সরকার কোনভাবেই গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না।’

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, ‘হাসান রাজা ও শাহ আব্দুল করিমের অসাম্প্রদায়িক এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু এটা কোন ধর্মীয় দাঙ্গা নয় বরং এটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একটা চাল যেটার মাধ্যমে তারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে তৎপর। ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত আসার পরও দেখতে পাচ্ছি যে বিগত কয়েক দশকে যতগুলো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসেছে তারা সবাই ধর্মকে ব্যবহার করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার নাম নিয়ে মডেল মসজিদ উদ্বোধনের নামে সাধারণ মানুষের জমি দখল করছে। অথচ তাদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করা উচিত, কলেজ প্রতিষ্ঠা করা উচিত, মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু আমরা দেখতে পাই এদেশের চিত্র হচ্ছে এমন " হিন্দু যদি এলাকায় থাকে তাহলে সে ভোট দিবে আমায় আর যদি ইন্ডিয়া যায় তাহলে দিবে আমাকে।"

বর্তমান সরকারের আমলেই সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলো হয়েছে দাবি করে অনিক রায় আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বারবার বোঝাতে চাচ্ছে যে তারা অসাম্প্রদায়িক। কিন্তু এই সরকারের আমলেই ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় নোয়াগাও হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ফেসবুক স্টাটাসের জের ধরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন ঝুমন দাস নামের এক সাংবাদিক।

সমাবেশে গানে গানে প্রতিবাদ, মোরাল পুলিশিং অভিনয় ও নাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রকাশ করেন প্রাচ্যনাট, বটতলা, থিয়েটার ৫২’সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি দাস, পুত্র ও ভাই সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ।


সর্বশেষ সংবাদ