আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ
আজ ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ‘লিটারেসি ফর হিউম্যান-সেন্টার্ড রিকভারি: ন্যারোয়িং দ্যা ডিজিটাল ডিভাইড’ প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে।
১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং পরের বছর বিশ্বে প্রথম দিবসটি পালন করা হয়। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমাজের মধ্যে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে এ দিবসটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবছর এ দিবসটি উদযাপনের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের সাক্ষরতা এবং বয়স্ক শিক্ষার অবস্থা তুলে ধরা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনকের হাত ধরে ১৯৭২ সালে প্রথম সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। অন্যদিকে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, দেশের বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, নিরক্ষরতা জীবন-জীবিকা নির্বাহে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশে বয়স্ক সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ অর্থাৎ ২৪.৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও নিরক্ষর। সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাক্ষরতা ও দক্ষতা উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
রাষ্ট্রপতি জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যুরোর মাধ্যমে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২১ লাখ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে স্বাক্ষরতা প্রদানের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। একইসাথে, ৮ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সী বিদ্যালয় হতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী এবং যারা কখনও স্কুলে পড়াশুনা করেনি এরকম ১০ লাখ শিশুর শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে।
আবদুল হামিদ বলেন, দেশের বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সাক্ষরতা ও জীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, এর ফলে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭৫.৬ শতাংশ হয়েছে; যা ২০১০ সালে ৫৬.৮ শতাংশ ছিল। মুজিববর্ষে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২১ লক্ষ নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা প্রদানের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন আছে। বিদ্যালয় হতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও যারা কখনও স্কুলে পড়াশুনা করেনি এমন ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১০ লক্ষ শিশুর শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রসমূহ বন্ধ থাকায় ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ ও ‘বাংলাদেশ বেতার’-এর মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সম্পৃক্ত রাখা হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আজ বুধবার সকালে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন দিবসটির উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বক্তব্য পেশ করা হবে। পাশাপাশি থাকবে আলোচনা অনুষ্ঠান, ক্রোড়পত্র প্রকাশ, গোলটেবিল বৈঠক ও টেলিভিশন টক-শো।
এছাড়া দেশের প্রত্যেক জেলায় জেলা প্রশাসন, উপানুষ্ঠনিক প্রাথমিক ব্যুরো এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে আগের তুলনায় সাক্ষরতার হার বাড়ছে। তবে এখনও প্রায় ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর।