খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল ড্রেস নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেকেই
করোনায় শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৫৪৪ দিন। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আগামী রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে স্কুল-কলেজ খোলার খবরে শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দের ঢেউ লাগছে। অন্যদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে স্বস্তি এসেছে অভিভাবকদের মনেও।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে দেড় বছরের পুরনো স্কুলপোশাক পরে ট্রায়াল দেওয়া শুরু করেছে অনেক শিক্ষার্থী। এতে স্কুল ড্রেস ছোট হয়ে গেছে অনেকের। তাদের নতুন পোশাক নিয়ে অভিভাবকরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
এদিকে, এক সপ্তাহের মধ্যে বানাতে হবে বাচ্চাদের নতুন স্কুল ড্রেস। এজন্য দর্জির দোকানে ভিড় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। আবার যাদের সামর্থ্য নেই তারা বাচ্চার নতুন পোশাক কিনে দেয়া নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
দর্জি ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছরের শুরুতে তারা শিক্ষার্থীদের নতুন কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও এবছর স্কুল বন্ধ থাকায় তা আর হয়ে উঠেনি। শুধু তাই নয়, করোনায় তারা পার করছেন এক কঠিন সময়। কাজ নেই এরমধ্যে কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া ও নিজ সংসার খরচ জোগাড় করতে না পারায় চরম সংকটের মধ্য দিয়ে করোনায় দিন কাটছে দর্জি ব্যবসায়ীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে দর্জিপাড়ায়ও আসবে স্বস্তির খবর। এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট বানাতে বাবার সঙ্গে রাজধানীর নিউমার্কেটে এসেছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আহনাফ আবির। স্কুলের নতুন ড্রেস অর্ডার দিয়ে আনন্দে আত্মহারা তিনি।
আবির জানায়, বছরের প্রথম দিনে ঝকঝকে-তকতকে নতুন বই পেলেও তা নিয়ে একদিনও স্কুলে যাওয়া হয়নি। এখন নতুন বইয়ের সঙ্গে নতুন স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে যাবো। নতুন বইয়ের সঙ্গে নতুন পোশাকের আনন্দই আলাদা।
শুধু আবিরই নয়, রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন শুরু হয়েছে স্কুলের নতুন পোশাক বানানোর ধুম। এতে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে দর্জিপাড়ায়। স্কুলগুলোতে পোশাক বাধ্যতামূলক হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকরা ছুটছেন দর্জিপাড়ায়।
এদিকে, বাচ্চার নতুন পোশাক কিনে দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেক অভিভাবক। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা নূরুল হকের অভাবের সংসার, নূন আনতে পানতা ফুরায়। তার তিন সন্তান সবাই স্কুলপড়ুয়া। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা নূরুলের পক্ষে তার সন্তানদের নতুন স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তিনি জানান, টিভিতে স্কুল খোলার নিউজ দেখেছি, তবে সন্তানদের আগের ড্রেসগুলো নেই। আর্থিক সংকটের কারণে নতুন পোশাক নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছি।
আজ রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আগামী ১২ সেপ্টম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
এদিকে, স্কুল-কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করারসহ মোট ১৯ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ গাইডলাইন অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আর আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে সব স্কুল-কলেজকে নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।
এই খবরে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সিলেটের উইমেন্স মডেল কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা তারান্নুম নেওয়াজ বলেন, দেশের সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার খবরে আমাদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি লাগছে। এ খবরে আমরা এতো উল্লাসিত যে ১২ তারিখের অপেক্ষায় যেন আর সইছে না।
সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৈয়দ আফজাল সিয়াম বলেন, স্কুল-কলেজ খুলছে এতে আমাদের আনন্দের শেষ নেই। আমরা আবার সেই চিরচেনা আঙ্গিনায় ফিরে যাবো। আমরা আমাদের ক্লাসরুমের আড্ডা খুব মিস করি।
নুরুল আলম আলমাস নামক এক অভিভাবক বলেন, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে আমি মনে করি ১৫ বছরের উপরের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতিষ্ঠানে ফিরলে আরও ভালো হত। কারণ ইতোমধ্যে অনেক দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের যেন সেইরকম কোন অবস্থা না হয়।