শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আন্দোলনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
রাজশাহীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। একই সাথে হামলার সময় পুলিশের নিরব ভূমিকা নিন্দা ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ছে তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবীকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর আমরা বিকেল তিনটায় জিরোপয়েন্টে শিক্ষক-নাগরিক সমাবেশ এর ঘোষণা দিচ্ছি।’
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয় তারা।
পুলিশের সামনেই হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হামলাকারীদের আটক না করে উল্টো আন্দোলনকারীদের সাথেই দুর্ব্যবহার করেছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আন্দোলনের প্রস্তুতির প্রথম পর্যায়েই আমরা পুলিশি বাধার সম্মুখীন হই। আমরা প্রথমেই লক্ষ্য করি যে জিরোপয়েন্টে আমাদের কর্মসূচির নির্ধারিত স্থানে আগে থেকেই পুলিশ তাদের বিশাল বাহিনী ও ভ্যানগাড়ি রেখে জায়গাটি অবরুদ্ধ করে রাখে।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা প্রতীকী অনশন করার পূর্বে পদযাত্রা ও গণ-চিৎকার কর্মসূচি করে সাধারণ মানুষকে আমাদের আন্দোলন সম্পর্কে অবহিত করার উদ্যোগ নিই। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে আমরা পদযাত্রা ও গণ-চিৎকার কর্মসূচি পালন না করতে পেরে শহরের জিরোপয়েন্ট চত্ত্বরে ‘প্রতীকী অনশন’ শুরু করি।’
এ সময় বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মন কর্মসূচির সভাপতি, সঞ্চালক ও সংগঠকবৃন্দের পরিচয় নেয়াসহ কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে বলে জানান তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অনেক বাদানুবাদের পরে আমরা অনশন চত্ত্বরে যাই কিন্তু পুলিশ তার বিশাল বাহিনীসহ ভ্যানগাড়ি ও পিক-আপ রেখে আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে বাধ্য করে। আমরা অনুরোধ করা সত্ত্বেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ফুটপাত ছেড়ে না দিলে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকি। এর মাঝেই মাইক বহনকারী রিক্সাচালককে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। আমরা আমাদের বক্তব্যের মাঝেই পুলিশকে গ্রেপ্তার হুমকির উদ্দেশ্য ও যৌক্তিক কারণ জিজ্ঞেস করি। কিন্তু তাঁরা উপেক্ষা করেন।’
‘এমন সময় অতর্কিত ভাবে একদল দুর্বৃত্ত আমাদের ওপর পুলিশি উপস্থিতিতেই হামলা চালায়। তাঁরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ ‘রামদা-লাঠি বের কর’ বলে হুমকি দিতে থাকে। এ সময় তারা সভার মাইক ভেঙে দেয় এবং মাইক বহনকারী রিক্সাচালককে আঘাত করে। এক পর্যায়ে তারা কর্মসূচির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ, সঞ্চালক মোহাব্বত হোসেন মিলন এবং অন্যতম সংগঠক নাদিম সিনার উপর হামলাসহ অন্তত পাঁচজনকে আহত করে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশ হামলাকারীদের আটক তো করেইনি বরং তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। ‘পুলিশের এমন আচরণে আমরা তৎক্ষনাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়ি।’
‘হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সনাক্ত করা গেলেও কোনো ছবি বা প্রমাণ না থাকায় আমরা পুলিশের কাছে দাবী করি তাঁদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার। সেই মুহূর্তে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবরণ চন্দ্র বর্মন ঘটনাস্থলে আমাদের সাথে কথা বলতে আসলে আমরা ঘটে যাওয়া ঘটনা ব্যাখ্যা করি। সহযোগিতা পূর্ণ আচরণ না করে তিনি আমাদের উপরেই চড়াউ হোন।’
আন্দোলনকারীদের দাবি পুলিশ তাদেরকে ‘তুলে নিয়ে যাবো’, ‘প্রেস ব্রিফিং ভরে দিবো’, ‘তোমার ওজন কত’, ‘হান্দায়ে দিবো’ এমন ধরণের হুমকিমূলক এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
তারা বলেন, ‘অতঃপর আমাদের দিনব্যপী প্রতীকী অনশন ভেস্তে দিয়ে পুলিশ বহর আমাদের উঠে যেতে বাধ্য করে। আমরা এমন ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের দায়িত্বহীন আচরণের জবাবদিহি দাবি করে তারা বলেন, ‘জিরোপয়েন্ট চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের দ্রুত সনাক্ত করে তাঁদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সাথে আমরা পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিতে শঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’