এবার জিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে বললেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক   © টিডিসি ছবি

জিয়াউর রহমানের লাশ বিতর্কের জের ধরে বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'আপনারা যদি এতই নিশ্চিত হোন তাহলে ডিএনএ টেস্ট করান। এটা তো বিজ্ঞানসম্মত। হাজার বছর আগের লাশ হলেও তো সেটা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে বুঝা যায়।'

আজ মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১২টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর সংগ্রামী জীবন ও কর্মের ওপর 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক হত্যা হয়েছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যার প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া আমরা মাত্র ৯ মাসে দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লেয়াকত আলি, আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন, জনেফ ক্যানেডি এমনকি আমাদের ইসলামের ইতিহাসের মহান ৪ খলিফার মধ্যে ৩ জন খলিফাকেই হত্যা করেছিল মুসলমান নামধারী কিছু মানুষ।

১৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের হত্যাকাণ্ড ছিল না বরং এটা ছিল একটা আদর্শকে হত্যা করা। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতানকে হত্যা করতে পারেনি, বাংলাদেশকে হত্যা করতে পারেনি, সংবিধানকে হত্যা করতে পারেনি। তারা চেষ্টা ককরেছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়েছে, দোয়ার মাহফিল করা হয়েছে। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধুর শক্তি অনেক বেশি। কারণ তার একটা আদর্শ ছিল।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন রাজনীতি করেছেন তখন পৃথিবীতে দু'টো পরাশক্তি ছিল। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, কমিউনিজমের মোড়ক চিন ও রাশিয়া। সাম্রাজ্যবাদীদের কথা ছিল ভাত কাপড়ের দরকার নাই, আমাকে ভোটের অধিকার দাও, কথা বলার অধিকার দাও তাতেই হবে। কমিউনিজমের কথা ছিল ভাত কাপড়, কথা বলার এসব অধিকারের কোনো দরকার নাই।

বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা যিনি সেসময় বলেছেন, আমি ভাতের অধিকারকে গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য ত্যাগ করতে পারব না। আমি ভাতের অধিকারও চাই, গণতন্ত্রের অধিকারও চাই।' এই ছিল বঙ্গবন্ধুর নীতি দর্শন। এই দর্শনের জন্যই বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যা হয়েছিল।

তিনি বলেছেন, 'আজকের পৃথিবী দু'ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আরেকদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।'

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলায় ভাষণই দেননি, তিনি এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, পারমানবিক বোমা বন্ধ করুন। এই হাজার হাজার কোটি টাকা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ব্যয় করুন, শিক্ষা খাতে ব্যয় করুন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করুন। কাজেই বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না; তিনি ছিলেন বিশ্বের নেতা।

তিনি আরো বলেন, ''ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শুধু একটা রাষ্ট্রের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা, বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, সারা জাতিকে দেখিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। পৃথিবীর কোনো বিপ্লবী নেতা এক জীবনে একযোগে এই তিনটা কাজ করে যেতে পারেন নাই। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি।' কাজেই বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন বিশ্বমানের নেতা।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আজকে বঙ্গবন্ধুর যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার আংশিক বিচার হয়েছে। শুধুমাত্র আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার করা হয়েছে কিন্তু এই ঘটনার পেছনে যে কুশীলব, এর নেপথ্যে যে নায়করা রয়েছে তাদের বিচার করা হয় নাই।'

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্য থাকায় জিয়াউর রহমানের হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি জিয়ার বিরোধিতা করি কিন্তু তার হত্যাকে সমর্থন করি না।'

জিয়াউর রহমানের লাশ বিতর্কে তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন, জিয়াউর রহমানের কফিনে তার লাশ ছিল না। কারণ জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি একটা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, কোন সাধারণ মানুষ নয়। তাহলে কেন তার কোন ছবি থাকবে না?

তিনি বলেন, আজকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনি নাকি জিয়ার লাশ দেখেছেন কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলি, সেখানে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না।

এছাড়াও তিনি বলেন , 'ব্যক্তি জিয়ার ব্যাপারে আমি কিছু বলি না বরং তাদের (বিএনপি) মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমার কথা। তারা জিয়ার নকল মাজার বানিয়ে জাতির সাথে মিথ্যাচার করছেন।'

বক্তব্যের শেষে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ যদি আমরা শোধ করতে চাই তাহলে অবশ্যই তার আদর্শকে আমাদের ধারণ করতে হবে।'

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক(অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট), জনাব আরিফুর রহমান সোহেল(উপদেষ্টা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ), জনাব রাশা( ভাস্কর শিল্পী ও উপদেষ্টা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।

সভায় আলোচনা রাখেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ।


সর্বশেষ সংবাদ