আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব: ডা. জাফরুল্লাহ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২১, ০৩:৫৭ PM , আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২১, ০৩:৫৭ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা দেওয়াকে ‘হয়রানি’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে ‘নাগরিক সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষকদের একজন আসিফ নজরুল। ছাত্রলীগ তাকে অপমান করেছে। প্রধানমন্ত্রী আপনার নৈতিক দায়িত্ব আছে। কারণ আপনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। সভাপতি হিসেবে আপনার নৈতিক দায়িত্ব হলো পাবলিকলি আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চাওয়া। তাহলে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি হবে। আপনার ছাত্রলীগ এখান থেকে আদব-কায়দা শিখবে। আদব-কায়দা না শিখলে জাতির উন্নতি হয় না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি কথা দিয়েছিলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারী ছাত্রদের নামে কোনো মামলা হবে না। অথচ তিনবছর ধরে সে মামলা ঝুলছে৷ আর নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ করায় ৫৪ ছাত্রের এখনও জামিন হয়নি৷ শুধু জামিন নয়, সম্পূর্ণ মামলা প্রত্যাহার করা উচিত। তবেই আসিফ নজরুল যে ভয় করেছেন, সেই কাবুলের দৃশ্য দেখতে হবে না। নতুবা কাবুল দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক আসিফ নজরুল একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশও হতে পারে। তিনি সেখানে কারও নাম না বললেও ওনারা (সরকার) বুঝেছেন, আসিফ নজরুল না বললেও মানুষ বুঝবে তিনি ওনাদের কথাই বলেছেন। তোরা যদি না পালাস তাহলে বল, আমরা দেশেই থাকবো পালাবো না। এটা বলার ক্ষমতা তাদের নাই। ... আসল কথা চোরের মনে পুলিশ-পুলিশ।
এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রক্টরকে উদ্দেশ করে বলেন, ছাত্রলীগ তালা দিয়েছে প্রক্টর জানে না। গতকাল প্রক্টর ভালো মানুষ সেজেছে, তালা খুলে দিয়েছে। নাসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে লাগানো পোস্টার নামিয়ে ফেলা হয়েছে; কেন, আপনি কি পরিচ্ছন্নতা কর্মী? কারা কারা একাজ করেছে তাদের নামে থানায় ডায়েরি (জিডি) করেন। এই প্রক্টর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করেনি? তা যদি হয়ে থাকে এটিও হতে হবে। আমরা আফগানদের পক্ষে নই। আমরা জানি না তালেবান যে সরকার গঠন করবে সেখানে গণতন্ত্র থাকবে কিনা, নারীর স্বাধীনতা থাকবে কিনা।
এসম তিনি করোনাকালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ঢাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিজেদের মতো করে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে যোগ দিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, আজকে এই প্রোগ্রামে আসার পথে আমাদের পাঁচজনকে আটক করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে গালগল্প সাজানো হয়। এতই যদি বুকের পাটা থেকে থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন, অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। সংবিধান যেখানে নাগরিকদের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, সেখানে দুই লাইনের স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে ছাত্রলীগের গুন্ডারা, আবরারের হত্যাকারী, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজরা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা মেরেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, একজন চেয়ারম্যানের কক্ষে কীভাবে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তরা তালা লাগায়। আপনারা যদি ছাত্রলীগের এই দুর্বৃত্তকে প্রশ্রয় দেন, গণতন্ত্রকামী ছাত্র-শিক্ষক-জনতাকে হয়রানি করেন- এর পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না। আসিফ নজরুল স্যারের লাঞ্ছনা ও অপমানের সাথে যারা জড়িতদের অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং নাটক বাদ দিয়ে সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলা ভাষায় একটি প্রবাদ আছে 'ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই নি'। ড. আসিফ নজরুলের দুই লাইনের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে তাতে অনেকেই আমাদের এই প্রবাদ মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই স্ট্যাটাসের কারণে সরকারের পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আফগানিস্তানের দৃশ্যে যেনো নিজেদের ভবিষ্যত দেখেছে। তা না হলে কেন তারা আসিফ নজরুলের উপর উঠে-পড়ে লেগেছে! বর্তমান সরকারেরও এই পরিণতি হবে তখন প্লেনের চাকা ধরে দেশ থেকে পালাতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হলো নাগরিকদের টুটি চেপে ধরার আইন। আমাদের যে আন্দোলন-সংগ্রাম তা হলো এই আইন বাতিল করে সরকারকে হটিয়ে বিজয় অর্জন করার আন্দোলন।
এসময় তিনি চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি নেতাদের উপর ‘হামলা-লাঠিচার্জ’ এর নিন্দা জ্ঞাপন করে অবলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে মোহাম্মদ রাশেদ খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, মুক্তিযুদ্ধা দলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আজিজুল হক, ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আলম ব্যাপারী, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ ছাত্র অধিকার, যুব অধিকার ও মহিলা অধিকার পরিষদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।