শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে টিআইবির সুপারিশ
করোনার প্রভাবরোধে গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। এছাড়া কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জে দেশের তরুণ সমাজ মানসিক ও আর্থসামাজিকভাবে সংকটময় সময় পার করছে। এমন পরিস্থিতিতে সশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়াও শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে আরও ৮টি সুপারিশ করে টিআইবি। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসকল তথ্য জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার ১৬ মাস পার হলেও সেগুলো খোলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সমন্বিত ও কার্যকর কোনো কর্মপরিকল্পনা নেওয়া যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসের চেষ্টা করা হলেও কারিগরি দক্ষতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে তা অনেকাংশেই সফল হয়নি। বরং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন এক বৈষম্যের মুখোমুখি করেছে। বেশকিছু গবেষণা বলছে, গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং ব্যবহারের দক্ষতা নেই ৮৭ শতাংশের। ফলে গ্রামীণ ও আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ধনী-গরিব ও শহর-গ্রামের মধ্যে শিক্ষা পাওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে; যা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো সরকারি উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। এটি সত্যিই হতাশার।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং মহামারির প্রভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার তথ্যানুযায়ী মহামারির থাবায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাক্রমে ১৯ ও ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে (২৬%)। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীকে কীভাবে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা হবে? আদৌ ফিরিয়ে আনা যাবে কিনা? সেটি নিয়েও কারও মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষা খাতের নতুন এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে যে বাড়তি বিনিয়োগ বা সহায়তা প্রয়োজন তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ এখনও দৃশ্যমান নয়, যাকে অপরিণামদর্শী বলাটা মোটেও বাহুল্য হবে না।
মহামারির এই সময়ে তরুণদের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও স্বাধীন মত প্রকাশ নিশ্চিত করতে টিআইবির সুপারিশগুলো হল-
১. শিক্ষার্থীসহ সংশ্নিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনার টিকা দিয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে।
২. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করে পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে নারী, প্রতিবন্ধী, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের যথাযথ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার পাশাপাশি করোনায় যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. কারিগরি ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করতে হবে।
৭. সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং নতুন বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে মহামারির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে।
৮. সব চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং
৯. তরুণ সমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইনি ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করারও দাবি জানিয়েছে টিআইবি।