লকডাউন আবার বাড়বে কি না, জানা যাবে আজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে  © ফাইল ফটো

কঠোর থেকে কঠোরতম লকডাউনের পরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় করোনা মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ডের এই সময়ে সবারই প্রশ্ন আগামী ৫ অগাস্টের পর লকডাউন থাকবে, নাকি থাকবে না?

ঈদের পরের কঠোর লকডাউনে প্রথমে সবকিছু বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও শিল্পমালিকদের বারবার অনুরোধে সরকার ডেডলাইনের চারদিন আগে গত রবিবার (১ আগস্ট) রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেয়। দু’দিনের জন্য চালু করা হয় গণপরিবহন।

এরপর থেকে রাজধানীসহ দেশজুড়ে রাস্তাঘাটে জনসমাগম বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে সামনের দিনে চলমান কঠোর লকডাউন কেমন হবে তা নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরা এখনও নিশ্চিত নন।

৫ অগাস্টের পর চলমান লকডাউনের কী হবে সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে আজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট)। এদিন সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা বৈঠক হবে।

যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞরা চান উচ্চ সংক্রমণের হার এক সংখ্যার ঘরে না আসা পর্যন্ত লকডাউন ও বিধিনিষেধ চালিয়ে নিতে। তবে তা হতে হবে মহামারী নিয়ন্ত্রণের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

সোমবার (২ আগস্ট) অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের দিন ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল।

কোরবানি ঈদের ছুটির পর কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত ২৮ জুলাই দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। সোমবার তা ২১ হাজারে পৌঁছাল মাত্র পাঁচ দিনে।

এদিন সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৯৮৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪৬ জনের।

গার্মেন্টস ও কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণার পর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার মধ্যেই শ্রমিকরা রওনা হয়েছে ঢাকায়। ফলে ফেরিতে বাড়ছে চাপ। মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে শনিবার দুপুরে গাদাগাদি যাত্রী নিয়ে আসা এই ফেরির আরোহীদের অনেকেই কারখানা শ্রমিক। 

নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩১৭ জন। তাদের মধ্যে ২১ হাজার ১৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

সংক্রমণের গত কয়েকদিনের এমন পরিস্থিতিতে রবিবার (১ আগস্ট) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জীবনের জন্য জীবিকা দরকার, আবার জীবিকার জন্য জীবনও থাকতে হবে। এই দুটোর সমন্বয় আমাদের করতে হয়। সরকারের সব দিকেই ব্যালেন্স করে চলতে হয়।

আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভাটি ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে আজ সকাল ১১টায় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।

মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে সভায় কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী, ১৬ জন সচিব, বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় থাকবেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, লকডাউন বাড়বে কি, বাড়বে না- মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তি শুনব, তারপর পর্যালোচনা করব। এ মুহূর্তে বলা ঠিক নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লকডাউন আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি দেখিনি; কালকে দেখব আর কি। কালকের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত আসবে আশা করছি। যাই হোক- একটা সিদ্ধান্ত তো হবেই।


সর্বশেষ সংবাদ