করোনাকালে আত্মঘাতী ১৯০ শিক্ষার্থী, চলতি মাসেই ২৬ জন
আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয়৷ তবে করোনাকালে দেশে অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা। পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন, আর্থিক সংকট, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতা— এসব কারণে মূলত আত্মহননের পথ বেঁচে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই রয়েছেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সংবাদকর্মীদের তৈরি এক পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মাসে কঠোর লকডাউন চলাকালীন সময়েও ২৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে সর্বশেষ চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত মোট ১৯০ জন শিক্ষার্থী আত্মঘাতী হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই এ আত্মহননের মিছিলে যোগ দেন রাজধানীর মুগদা মানিকনগর এলাকার আফসান ওমি নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী।
পরিসংখ্যান বিবেচনায়, মোট আত্মহননকারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ জন; কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ৩৪ জন; মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ১১ জন। তবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে এ সংখ্যা একশোর কাছাকাছি। অন্যদিকে আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের মার্চ মাসে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর মানসিক চাপ কাজ করছে। দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ও মানসিক বিপর্যয়সহ নানান ছোটখাটো সমস্যায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে তারা আত্নহননের সিদ্ধান্তে ধাবিত হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পরিবারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন, সচেতনতা সৃষ্টিসহ তরুণদের অনুকূলে পরিবেশ গড়তে পারলে আত্নহত্যা প্রবণতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
চলতি মাসে আত্নহত্যার ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে। আত্নহননকারীদের শীর্ষে রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। জুলাই মাসে ১৪ জন স্কুল পড়ুয়া, ৪ মাদ্রাসা পড়ুয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ৮ জন করে মোট ২৬ জন শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা ছোট ছোট কারণেই আত্নহত্যা করছে। দেখা যায়, অধিকাংশ বাচ্চাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের এখন শাসন করতেও ভয় হয়। কারণ কখন কি করে বসে! আত্নহত্যার ঘটনা থামাতে অভিভাবকসহ সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ বাচ্চাদের বুঝাতে হবে তাদের ভালো-মন্দ।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাহাতের মা রুমিনা বলেন, দীর্ঘ ছুটিতে অনেক শিক্ষার্থী ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠছে। নানান নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা৷ একটু শাসন করলেই আত্নহত্যা করে বসছে। সংকটকালীন সময়ে বাচ্চাদের বুঝাতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় পরিবারের সহযোগিতামূলক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত ১ জুলাই নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা হাঁসদাক উর্ণা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেছে। একইদিনে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় কলি আক্তার (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী ঘরের আড়ায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কলি আক্তার সদর উপজেলার বাগবেড় গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। বর্ণাকান্দা মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।
২ জুলাই বাবা-মার শাসন সহ্য করতে না পেরে অভিমানে এক কলেজছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই শিক্ষার্থীর নাম রুমা আক্তার (১৮)। নারায়গঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
৪ জুলাই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আবিদ হাসান আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ছিলেন। জিআরইতে তার স্কোর ছিল ৩১২ এবং ভালো কিছু পাবলিকেশনও ছিল। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে বিসিএস কিংবা সরাকারি চাকরির চাপ ছিল বলে সহপাঠীরা জানিয়েছেন। ফলে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা সহপাঠীদের।
গত ৫ জুলাই রাজধানীতে উর্মি আক্তার নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসাবোর একটি বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
একইদিন বরগুনায় বাড়ির মালিকের ছেলের যৌন হয়রানি ও মিথ্যা বদনাম সহ্য করতে না পেরে মাকে চিঠি লিখে সামিয়া নামে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
একইদিনে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৫ নম্বর বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে বোনের সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে মো. রাহুল (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের কোয়াটারে এ ঘটনা ঘটে। মো. রাহুল পিতার নাম মো. দেলোয়ার হোসেন। সে ওই এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাজীপুর গ্রামে রিতা খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। ১৪ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে স্থানীয়দের ধারণা। ৫ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে রিতার নানা কাজীপুর গ্রামের কিন্নাল আলীর ঘর থেকে রিতার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা।
গত ৮ জুলাই ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের আওলাতলী গ্রামে বাড়ির রান্না ঘরের আড়ায় গলায় মাফলার পেঁচিয়ে স্কুলছাত্রী তানজিনা আক্তার (১৪) আত্নহত্যা করেন। নিহত তানজিনা আক্তার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
নাটোররের সিংড়া উপজেলায় ভাত খাওয়া নিয়ে বড়বোনের ওপর অভিমান করে মো. আকাশ (৯) নামের এক শিশু শিক্ষার্থী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১০ জুলাই রাতে সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ধাপ কুড়াইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আকাশ একই এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে ও কুড়ি পাকুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
১৩ জুলাই মোবাইল ফোনে গেম খেলা নিয়ে বকা দেয়ায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল দক্ষিণ পাড়া এলাকায় চাঁদনী আক্তার (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।
একইদিন প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সামিয়া আক্তার স্বপ্না (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সামিয়া আক্তার স্বপ্না সোনাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
১৪ জুলাই দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নার্সিং পড়ুয়া এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের বড়গ্রাম চেয়ারম্যান পাড়ার আবুল কালাম আজাদের কন্যা ও দিনাজপুর আনোয়ারা নার্সিং কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী ফারজানা অপি ঘটনার দিন রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার বাবা ১৫ জুলাই সকালে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়।
১৬ জুলাই পিরোজপুরের কাউখালিতে ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর হুমকি দেওয়ায় এক স্কুল ছাত্রীর আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ একইদিন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকার প্রবর্তক সংঘের হোস্টেল থেকে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত সোনিয়া সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ এলাকার লালু দাশের মেয়ে।
গত ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশান নিকেতনের একটি বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে ফারিয়া হায়দার (২১) নামে এক মেডিকেল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
একইদিন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রেমে বাধা দেয়ায় দশম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত মো. ছালাহ উদ্দিন (১৮) চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরসাভিকারী গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
২১ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফলাফলে হয়েছে। ফলে অকৃতকার্য হয়ে মশিউর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।
একইদিন ফরিদপুরে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রেমিকের নাম অধীর সিকদার (২০)। এ বছর ভাঙ্গা সরকারি কে এম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অধীরের।প্রেমিকার নাম মুন রানী মজুমদার (১৫)। স্থানীয় ব্রাহ্মনদী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল মুন। জানা গেছে, অধীর সিকদার ও মুন রানী মজুমদারের মধ্যে দুজনের পরিবারের সদস্যরা এই সম্পর্কে মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় অধীর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আর মুন বিষপান করে আত্মহনন করেছে।
গত ২২ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে শারমিন আক্তার (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২৩ জুলাই কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের রাতে তিন বখাটে কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক মাদ্রসাছাত্রী। ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে ২৪ জুলাই ভোর রাতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে ওই মাদ্রাসাছাত্রী। একইদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাবার ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তার নাম আরিফ হোসেন (২০)।
২৫ জুলাই টাকা চেয়ে না পেয়ে পটুয়াখালীর মহিপুরে অভিমানে মায়ের ওড়নায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন সোহাগ (২২) নামের এক কলেজছাত্র। একইদিন মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় বাবার ওপর অভিমান করে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে রেজাউল (১৫) নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। নিহত রেজাউল চককালিকাপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ও স্থানীয় ভ্যানচালক মহাতাব আলীর ছেলে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ২৬ জুলাই রাজধানীর মুগদা মানিকনগর এলাকায় একটি বাসায় আফসান ওমি (১৭) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি তরুণদের একটি সংগঠনের জরিপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। জরিপে বলা হয়, করোনাকালে মানসিক বিভিন্ন চাপের ফলে আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ সময়ে মানসিক চাপ পড়েছে ৬৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। আঁচল ফাউন্ডেশন নামে ওই সংগঠনটি বলছে, পারিবারিক, সম্পর্কজনিত, আর্থিক, পড়াশোনা এবং অন্যান্য বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনাকালে যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না। যে কারো আত্মহত্যা করার পেছনে আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশেরও দায় রয়েছে।যারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত শুধুমাত্র তাদেরকে কউন্সেলিং দেয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না। বরং একজন তরুণ বা তরুণী কেনো আত্মহত্যাপ্রবণ বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে তার কারণ বের করে সমাধান করে সমস্যার মূলোৎপাটন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আত্মহত্যা মূলত একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত; যে আত্মহত্যা করবে সেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ কেউ হয়তো আগে থেকেই অনেক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে থাকতে পারে। যখন এই যন্ত্রণাগুলো পরিমাণে বেশি হয় কিংবা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায় যেটাকে আমরা বলি 'তীব্র মনোবেদনা'।
“এটি যখন সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় অর্থাৎ ব্যক্তি মনে করতে পারে আমার বেঁচে থেকে লাভ নেই, নিজেকে মূল্যহীন মনে করে। এভাবে অনেকগুলো মানসিক সমস্যা যখন একত্রিত হয় মনোজগৎকে নাড়া দেয় কিংবা আন্দোলিত করে তখন ব্যক্তি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা নেয়। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন ফলে আত্মহত্যাও বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ক্ষেত্র কাজ করে। ব্যক্তি বিশেষে ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তির যখন নৈতিক মূল্যবোধ একেবারে ফুরিয়ে যায় তখনই সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আত্নহত্যা মহাপাপ জেনে ও ব্যক্তি তখন আত্মহত্যা করে।
“এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু তার পরিবার থেকে কি ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠছে সেই মূল্যবোধগুলো আঁকড়ে ধরে কিন্তু শিশুকে ভবিষ্যতে পরিচালিত করবে৷ বাবা-মা কর্তৃক গৃহীত আদর্শ শিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”