পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস আজ

সরকারি নির্দেশনা থাকলেও নেই শিক্ষার্থীদের সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ

কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই শিক্ষার্থীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ
কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই শিক্ষার্থীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ  © টিডিসি ফাইল ফটো

পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পানিতে ডুবে। আজ ২৫ জুলাই। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হতে যাচ্ছে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ’ দিবস। পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধকল্পে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারি, সবাই মিলে প্রতিরোধ করি’। প্রতি বছরের ২৫ জুলাই দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের প্রস্তাবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে সরকার দেশের সব উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বাধ্যতামূলক করে একটি খসড়া পরিপত্র জারি করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়। সংশ্নিষ্টদের মতামত নেওয়ার পর ওই বছরের এপ্রিলে চূড়ান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। এরপর আর এ নির্দেশনার অগ্রগতি নেই।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুকুরে শিক্ষার্থীদের সাঁতারের ব্যবস্থা করার নিদের্শসংবলিত ওই পরিপত্রের কথা এখন জানেনই না সংশ্নিষ্ট অনেক কর্মকর্তা। কিন্তু বাংলাদেশে পানিতে ডুবে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচানো যেত।

তারা বলছেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার অন্যতম প্রধান পথই হচ্ছে সাঁতার শেখানো। অথচ সাঁতার শিখানোর মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর বেশির ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার এতই বেশি যে জাতিসংঘ একে 'নীরব মহামারি' বলেই আখ্যা দিয়েছে। সাঁতার না জানার কারণে বাংলাদেশে মাসে গড়ে ৮২ জন প্রাণ হারাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ সংগঠন সমষ্টি।

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপ হয়েছে ২০১৬ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ঐ জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতি বছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের বিষয়ে রাজধানীসহ দেশের বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্কুলে সাঁতার শেখানোর কোনো কার্যক্রম নেই। অভিভাবকরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বিষয়টির অগ্রগতি কিংবা বাস্তবায়নের বিষয়টি তার জানা নেই। শিক্ষা সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এটি কেন কার্যকর হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখবেন।

রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দুই-একজনের ওই পরিপত্রের কথা জানা থাকলেও অভিভাবক বেশিরভাগই এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরিপত্রের কথা জানলেও পুকুর বা জলাশয় না থাকার কারণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও নেই কোনো নজরদারি। ফলে সাঁতার না জানায় প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও স্কুলশিশুর মৃত্যু হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ