দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গাছে উঠে অনলাইন ক্লাস করছে শিশুরা
করোনাকালে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস ভয়ানক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার ভয়ানক চিত্র দেখা গেছে শ্রীলঙ্কার মিগাহাকিউলার প্রত্যন্ত গ্রাম বোহিতিয়াওয়ায়। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সংরক্ষিত বনের ঘন ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পাহাড়ি পথ হেঁটে উঁচু স্থানে বা গাছের চড়ে বসতে হয় শিশুদের। কোনো কোনো দিন পথে দুয়েকটা চিতাবাঘ বা হাতির সঙ্গেও দেখা হয়ে যায় তাদের!
মোবাইলের নেটওয়ার্ক পেতে শিশুদের প্রায় এক বছর ধরে এভাবে কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। এই শিশুদের বেশিরভাগের বাবা-মা কৃষক। তাঁরা শিশুদের স্কুটারে করে নিয়ে যান বাড়ি থেকে অনেক দূরে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি পাহাড়ে। যেখানে গাছের ওপর উঠলে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। ৩০ ফুট ওপরে, গাছে বসে শিশুরা তাদের হোমওয়ার্ক আপলোড করে এবং পাঠের পরবর্তী পরিকল্পনাগুলো ডাউনলোডের মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে।
শিশুরা এভাবে দিনে দুইবার ওপরে ওঠে। আর অভিভাবকেরা তাদের নিরাপত্তার জন্য নিচে অপেক্ষা করেন। লেখাপড়া শিখতে হবে, তাই তারা কষ্ট করে সন্তানদের সেখানে নিয়ে যান এবং সময় দেন। কিন্তু যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা, এ নিয়ে বাবা-মারা সব সময় উদ্বেগে থাকেন।
দ্বীপ দেশটির মধ্য-পূর্বাঞ্চলের গ্রামে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধারও অভাব রয়েছে। শিশুরা সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। তাদের সবার কাছে সেলফোন বা ল্যাপটপ নেই। ফলে চার বা পাঁচজন শিশুকে একটি ডিভাইস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে হয়।
করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ অংশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সব শিশুকে পাঠদান অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সিলন শিক্ষক ইউনিয়নের প্রধান জোসেফ স্টালিন বলেন, শ্রীলঙ্কার ৪৩ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারবে না। বেশিরভাগের ডিভাইস বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
শ্রীলঙ্কার সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে সব শিক্ষককে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে।