১৪ জুলাই ২০২১, ০০:২৩

বুয়েট সরকারকে সাংঘাতিকভাবে ভুল পথে হাঁটিয়েছে: সালমান এফ রহমান

সালমান এফ রহমান  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (​বুয়েট) একটি প্রকল্প নকশা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেছেন, বুয়েট সরকারকে ‘সাংঘাতিকভাবে ভুল পথে’ হাঁটিয়েছে।

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) নকশার কাজ বুয়েট ঠিকভাবে করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সালমান এফ রহমান বলেন, এ কারণেই এই শিল্পনগরীকে এখনও কমপ্লায়েন্স করা যায়নি।

চামড়াশিল্প নিয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) এক অনলাইন আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। ‘রিভাইভিং দ্য লেদার সেক্টর ইন দ্য আফটারম্যাথ অফ কোভিড-১৯’ শিরোনামে আলোচনা সভাটি আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

আলোচনায় সাভার চামড়া শিল্পনগরী প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা এখনও এটাকে কমপ্লায়েন্স করতে পারিনি। সিইটিপির নকশা যারা করেছিল, তারা কাজটি সঠিকভাবে করেনি। আমরা অত্যধিক মাত্রায় বুয়েটনির্ভর হয়েছি। কিন্তু বুয়েট আমাদের সাংঘাতিকভাবে ভুল পথে হাঁটিয়েছে। বারবার ভুল নকশা করেও তা স্বীকার করেনি। আমাদের ঘুরিয়েছে। তবে যেহেতু একটা অবকাঠামো হয়ে গেছে, তা ভেঙে ফেলা যাবে না। এখন এটাকে সংস্কার করে এগোতে হবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের পরিকল্পনা বিদেশি কাউকে দিয়ে সিইটিপির প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করা। আমি এরই মধ্যে একটি উদ্যোগ নিয়েছি। একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে বলেছি এর দায়িত্ব নিতে। তাদের বলেছি, এটাকে কীভাবে এলডব্লিউজির সনদ পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা করো। তারা এরই মধ্যে সাভার সিইটিপি নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই তারা আমাকে একটা প্রেজেন্টেশন দেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি, তারা যেন বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখে।

পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরী সাভারে সরিয়ে নিতে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষের কথা ছিল। তবে ১৮ বছর পার হয়ে গেলেও এই শিল্পনগরী পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠেনি।

প্রকল্প শেষ না হলেও ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত হাজারীবাগের চামড়া কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। ফলে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে বেশ কিছু চামড়া কারখানার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ ছিল। এ সনদের সুবাদে তারা জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় চামড়া রপ্তানি করতে পারত। হাজারীবাগে কারখানা বন্ধ হওয়ায় সেই সনদ ও বায়ার (বিদেশি ক্রেতা) হারায় চামড়াশিল্প কারখানাগুলো।

এত দীর্ঘ সময়েও সাভারের চামড়াশিল্প নগরী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় এখনও এলডব্লিউজির সনদ ফিরে পায়নি কারখানাগুলো। একই সঙ্গে নতুন বাজার সৃষ্টি হয়নি। সনদ না থাকায় জাপান, কোরিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকায় এলডব্লিউজির আওতায় চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না কারখানাগুলো।

আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের দেশের শিল্পকারখানার বড় সমস্যা কমপ্লায়েন্স। তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের চাপে তৈরি পোশাকশিল্পে কমপ্লায়েন্স হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোও স্বীকার করছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স।

“তবে বড় সমস্যা স্থানীয় বাজারের জন্য যারা পণ্য উৎপাদন করেন তাদের। সবশেষ সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনা তার প্রমাণ। সব আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এটি শিরোনাম হয়েছে, যা আমাদের জন্য নেতিবাচক।”

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হলো, স্থানীয় শিল্পকারখানাকে কীভাবে কমপ্লায়েন্স করব? আমি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মতো কিছু একটা করতে হবে। কমপ্লায়েন্স করার জন্য কারখানাগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করতে হবে। সরকার সে ক্ষেত্রে কারখানাগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়ন করবে। ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব স্থানীয় শিল্পকারখানার কমপ্লায়েন্স থাকবে না, তাদের পণ্য বাজারে বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।