'যে দায়িত্ব পাইছো ওইটা পালন করো, তারপর বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখো'
‘নগর পরিচালনা করতে পারে না। আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখো। আরে বড় হওয়ার পথে সাঈদ খোকন বাঁধা নাকি? তুমি বড় হও তাতে আমার কী? আমাকে মেরে বড় হইতে হইব নাকি? যে দায়িত্ব পাইছো ওইটা মিয়া পালন করো, তারপর বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখো।'-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসকে লক্ষ্য করে এমনি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তাপসের উদ্দেশে ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র খোকন আরো বলেন, ‘আরে এই তাপসকে বলি, কতটুকু ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? এই শহরের মানুষ জানে। কত পারসেন্ট ভোট পেয়েছেন, এই শহরের মানুষ জানে। যাই হোক, ক্ষমতায় আছেন। মানুষের কাজ করেন। আরে ভাই, ঢাকার মরা লাশটার ওপরও তো ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি কীভাবে ভালোবাসা আশা করেন? কীভাবে ঢাকাবাসীর ভালোবাসা আশা করেন?’
গত রবিবার সাঈদ খোকনের প্রতিষ্ঠানসহ তার স্ত্রী, মা ও বোনের আটটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন খোকন।
খোকন উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘আপনার ব্যর্থতার দায় ঢাকার জন্য আর মানুষ পান নাই? বারবার শুধু আমার উপরই? কেন? কেন? রক্ত দিয়েছে আমার বাবা। জীবন দিয়েছি আমরা। এই সংগঠনের জন্য। এই শহরের মানুষের জন্য। এই দেশের মানুষের জন্য। অপমান হওয়ার জন্য? আইনী মোকাবিলা করব। সাথে সাথে ঢাকাবাসীকে নিয়ে প্রয়োজন হলে আরেকবার সংগ্রাম হবে।’
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন সাঈদ খোকন।
সাবেক মেয়র অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকে এই শহরে মোড়ে মোড়ে একটা ব্যাগ নিলে চাঁদা তোলা শুরু করে। একটা স্লিপ দিয়ে দেয়। দেয় কি দেয় না বলেন?’ এসময় উপস্থিত অনেকে ‘দেয়’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। উপস্থিত ব্যক্তিদের কথার রেশ ধরে সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘আমি কী বলব? আরে মানুষের কথা শোনেন। আমি লক্ষ লক্ষ ব্যানার, ফেস্টুন ফেলে দিয়েছিলাম। পরিষ্কার করেছি। আজ সিটি করপোরেশন তার নিজের নামে ব্যানার ফেস্টুন লাগায়।’
তিনি বলেন, 'আমি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাই। মানুষ মারা গেলে মানুষের বাড়ি বাড়িতে গিয়েছি। নাগরিক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি ফ্রি করে দিয়েছিলাম। আজ মিরপুরে গিয়ে দেখেন একটা লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। ব্যর্থ বলব না তাহলে কী বলব?’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করবো আমার জব্দকৃত অ্যাকাউন্ট সচল করে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা পরিচালনা করার সুযোগ করে দিবেন। যেটা আমার মৌলিক, আমার পরিবারের মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। তদন্ত করতে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতেই পারে। কিন্তু কারও প্ররোচণায় কোনো দলাদলিতে নিজেকে দুর্নীতি দমন কমিশন জড়াবে একজন নাগরিক হিসেবে আমি এটা প্রত্যাশা করি না।’
সাবেক মেয়র বলেন, ‘আমি কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা একজন নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই। এই শহরে যেমন লক্ষ নাগরিকের মতো আমিও একজন সাধারণ নাগরিক। একজন সাধারণ নাগরিকের যে প্রাপ্ত অধিকার রয়েছে আমি সেই প্রাপ্ত অধিকারটুকু ফিরে পেতে চাই।’
খোকন বলেন, ‘আপনারা জানেন আমার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এই শহর, তথা এদেশে মানুষের সেবা করে আসছে। প্রায় সত্তর বছর হবে্। আপনার নিশ্চয় জানেন ঢাকার শেষ সর্দার আলহাজ মাজেদ সরদার। তার মেয়ে আমার মা ফাতেমা হানিফ। তার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করানোর মধ্য দিয়েও আমার বৃদ্ধ মাকে হয়রানিমূলক আচরণের স্বীকার হতে হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ন করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
খোকন আরও বলেন, ‘আমার পরিবার, আমরা যদি ব্যবসায়ে মনোযোগ দিতাম এই পরিবার বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম থাকতো। এই শহরের জন্য আমার নানা মাজেদ সরদার করে গেছেন। আমার পিতা মোহাম্মাদ হানিফ করে গেছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এই নগরের মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুরর একান্ত সচিব হিসেবে বাংলার মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে মোহাম্মাদ হানিফের অবদান রয়েছে।’
‘২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে তার প্রাণপ্রিয় জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে বাঁচিয়েছেন। সেই মোহাম্মাদ হানিফের স্ত্রী আমার বৃদ্ধ মা লাঞ্ছিত হবে অপমানিত হবে ঢাকা শহরের মানুষ মেনে নেবে না’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক মেয়র হানিফপুত্র খোকন।