বিদেশে ‘ব্লেন্ডিং’ পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও দেশে নেই পরিকল্পনা
মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যান্য দেশে ‘ব্লেন্ডিং’ পদ্ধতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে আমাদের দেশে এ বিষয়ে নেই কোন যথাযথ উদ্যোগ।
করোনা থেকে খুব শিগগির মুক্তির কোন আশা দেখছেন না শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, স্বল্পতার কারণে সবাইকে করোনার টিকার আওতায় আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে। প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি যদি এমন থাকে তাহলে তিন-চার বছর কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে- এমন প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে কার্যকর কোনো পরিকল্পনা নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। গত শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা না দিয়েই পরবর্তী শ্রেণিতে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। এবছরও পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সরকার শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলেও তা মূল্যায়ন না হওয়ায় সেটিও সফলতার মুখ দেখছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ‘ব্লেন্ডিং’ পদ্ধতিতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ কমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। আবার করোনা বাড়লে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে করোনার শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি এলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আর এখন করোনার ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
মার্চে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ১৩টি দেশের তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের নাম।
অনেক দেশই করোনাকালীন শিক্ষা নিয়ে তিন থেকে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করেছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল মালেক বলেন, তারা ‘ব্লেন্ডিং’ পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ কমে এলে সরাসরি ক্লাসে যাচ্ছে, আবার বেড়ে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অনলাইনে চলে যাচ্ছে। করোনা শেষ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে- এ চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে বলেও উল্লেখ করে তিনি।
আগে থেকেই বিকল্প খোঁজা উচিত ছিল জানিয়ে শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, সেটা না করে আমরা বলেছি, স্কুল খুলবে না, ছুটি বেড়েছে এসব। আমাদের বলা উচিত ছিল, পড়ালেখা করো, অ্যাসাইনমেন্ট করো। আমাদের অঙ্গীকারের অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।