ত্রাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর হওয়ার নির্দেশ
ত্রাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদেরকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে খুবই স্বল্প সংখ্যক জনপ্রতিনিধি দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি।
আজ রোববার (২০ জুন) নাগরিক সমাজের সংগঠন ও নেটওয়ার্ক ‘গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম’ আয়োজিত ‘করোনাকালে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা ও বাজেট ২০২১-২২’ শীর্ষক অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা সমস্যা তৈরি ফলে বিরূপ প্রভাব মানুষের জীবনযাত্রাতেও পড়েছে। যদিও বাংলাদেশে এর প্রভাব এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য স্থানের চেয়ে কম। পরিস্থিতিগত কারণে এবারের বাজেট বরাদ্দ অসন্তোষজনক নয়। করোনাকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় রাতদিন কাজ করেছে। সেজন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারেন। দেশের স্বার্থে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহাবস্থানের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।
গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান ও বিআইআইএসএসের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর, উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকারিয়া আলম, মাগুরার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, শ্রীপুরের আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য কৃষ্ণা রানি প্রমুখ।
আরমা দত্ত বলেন, বাংলাদেশ তার জনবলকে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করে একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে আমরা সেভাবে এগোতে পারিনি। স্থানীয় সরকারকে কীভাবে আরো সক্রিয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যায় সে চেষ্টা করতে হবে। আমলাদের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বন্বের বিষয়টিতে একটা সহযোগিতা ও সমন্বয়ের জায়গায় আনতে হবে। সেজন্য আইনের সংশোধন-সংযোজন হতে পারে। স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন হলে তা স্থানীয় সরকারকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
গভার্নেন্স শুধুমাত্র স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার বিষয় নয় বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে ড. আসিফ শাহান বলেন, সরকারকে বিভিন্ন পক্ষের সাথে কাজ করতে হয়, সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্নরকমের অঙ্গীকারকে ম্যানেজ করতে হয়। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই জনপ্রতিনিধিদের এড়িয়ে প্রশাসনকে করোনাকালে নানা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদেরকেও সরকারের মতো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা শিখতে হবে। না হলে তারা পিছিয়ে পড়বেন। এক্ষেত্রেই এখন আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার, কাজ করা দরকার।
বিদায়ী অর্থবছরের বরাদ্দের চাইতে এবার বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ প্রকৃতঅর্থে কমে গেছে উল্লেখ করে ড. মাহফুজ কবীর বলেন, এতে স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা আরো হ্রাস পাবে। করোনার টিকা প্রদান থেকে শুরু করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিত। স্থানীয় সরকারের যে কার্যক্রমগুলো রয়েছে, সেখানে কোভিড-১৯ নিয়ে কোনো কথা নেই, থাকলে দায়িত্ব ভাগ করা সহজ হতো।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এসবের সময়সীমা নির্ধারণ না করলে কখনই তা শেষ হবে না। সরকার যদি শুধু তার নির্বাচনী ইশতেহারটাই বাস্তবায়ন করে, তাহলেও বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মহসিন আলী বলেন, বেশিরভাগ স্থানীয় সরকারের আয়ের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সম্পদের অভাব রয়েছে এবং স্থানীয় উৎস হতে আয়ের সিংহভাগই জাতীয় সরকারের কাছে চলে যায়। বর্তমানে ভূমি হস্তান্তর ও উন্নয়ন করের খুব সামান্য অংশ, মাত্র এক শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদ এবং দুই শতাংশ পৌরসভা পেয়ে থাকে।
এছাড়াও বর্তমান করোনা প্রেক্ষাপটে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের কিছু সুপারিশ তিনি তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে-
১. করোনা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রকৃত উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
২. করোনা সংকট উত্তরণে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন ও তদারকির ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করা।
৩. করোনা প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা ও সরকারি ত্রাণ কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি দল-মত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে হস্তান্তরিত কার্যক্রমসমূহ ন্যস্ত করা এবং জেলা পরিষদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করা।
৫. করোনা এবং সার্বিক উন্নয়ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেশের প্রকৃত দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের তালিকা প্রস্তুতের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ উদ্যোগের সাথে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করা; মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে যাত্রার পথে সকল শর্তে সুষম ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং বিকেন্দ্রীকরণ নীতির আলোকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা।
৬. স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনদের স্ব স্ব কাজের ক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করা। এবং
৭. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং জাতীয় সরকারের সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।