করোনার তৃতীয় ঢেউ আসছে

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছে মানুষ
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছে মানুষ  © ফাইল ফটো

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। করোনার ডেলটা ধরনের অতি সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সর্বত্রই উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। ফলে দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হওয়ার আগেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ হাজার ৪৬৬ জনে। একই নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ জনে। ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৯৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৪টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৩ লাখ ৫ হাজার ৫০৩টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত দুটোই উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত ১৩ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের (৬ থেকে ১২ জুন) চেয়ে মৃত্যুহার বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। এই সময়ে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সামনে কোরবানির ঈদ। ঘরমুখী মানুষের স্রোত নামবে। কোরবানির পশুর হাটে মানুষের ভিড় হবে। উপেক্ষিত হবে স্বাস্থ্যবিধি। রোজার ঈদে লকডাউন দিয়েও ঘরমুখী মানুষের স্রোত থামানো যায়নি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ‘লকডাউন’ ঘোষণা করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। লকডাউন ঘোষিত এলাকায় মানুষের সমাগম কমছে না। এতে করে ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

এমতাবস্থায় দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। আর সেটি হবে ভয়ঙ্কর। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শুধু টিকার ওপর জোড় না দিয়ে সর্বত্রই মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করার ওপর জোড় দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনই সতর্ক না হলে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও সর্তক করেছেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধ করতে হলে টিকা দিতে হবে এবং সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভারত, ইউরোপ, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথমে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে ব্যাপকভিত্তিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে তারা।

যে যেখানে আছে, সেখানে ঈদ করবে- সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে কোথায় সংক্রমণ বেশি, সেটা বোঝা যাবে এবং অধিক সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করে কঠোর লকডাউন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ করতে হবে।

অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন এবং করোনা নেগেটিভ তারাই শুধু কোরবানির পশুর হাটে যেতে পারবেন-এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ইজারাদারদের কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে। গত ঈদে যেভাবে মানুষ যাতায়াত করেছে, এবার সেই অবস্থা হলে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে আর দেরি হবে না।