শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মিছিল, কী করবেন অভিভাবক-শিক্ষকেরা?
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আরও অনেকে হতাশায় কিংবা মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। অন্যদিকে বাড়ছে কিশোর গ্যাং, মোবাইল আসক্তির মতো সমস্যাও। ফলে অভিভাবকেরা জটিল সমস্যায় পড়েছেন। উদ্বেগ বাড়ছে সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যেও।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব খবর এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় ১৫ মাস। এ সময়ে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর প্রায় অর্ধেকই স্কুল শিক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশেরই বয়স ১২ থেকে ২০ বছর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। হতাশা, পরিবারের শাসন, কিছু চেয়ে না পাওয়া, প্রেম, অর্থ সংকট, বিষণ্নতাসহ নানা সমস্যায় তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাদের সঙ্গে সময় কাটানোসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনেকদিন ঘরে বন্দি। বন্ধু-বান্ধবের সান্নিধ্য পাচ্ছে না। সরকার অটোপাস দিলেও তা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে কাম্য নয়। অনেক অভিভাবকের চাকরি চলে গেছে, আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংবাদে অনেকের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। এমন অনেক কারণে আত্মহনন করছে কেউ কেউ।’
আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘কোনো অভিভাবক তাঁদের সন্তানের আচরণ হঠাৎ অস্বাভাবিক দেখলে মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এ সময়ে অভিভাবকদের দায়িত্ব সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও উদ্বিগ্ন ও বিষণ্নতায় ভুগলে তারা নিজ দায়িত্বে কাউন্সেলিং নিলে আত্মত্যার পরিমাণ কমে আসবে।’
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। তারা বলছে, করোনা সংক্রমণের সময়ে আত্মহত্যা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। আর মোট আত্মহত্যার ৫৭ শতাংশ নারী। বাকি ৪৩ শতাংশ পুরুষ।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আত্মহত্যা করার কারণ ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে। স্বার্থে আঘাত লাগা, চাহিদা ও প্রাপ্তির ব্যবধান, কর্মহীনতা, নৈতিক মূল্যবোধ ফুরিয়ে যাওয়া, অর্থসংকটসহ বেশ কয়েকটি কারণ আত্মহননের পেছনে কাজ করে। করোনার ঘরবন্দি সময়ে মানসিক অস্থিরতাও অন্যতম দায়ী।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া জরুরি উল্লেখ করে ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জ্যেষ্ঠদের খেয়াল রাখতে হবে, ছেলে-মেয়ে কী করছে। না হলে অনেকে ভুল পথে পা বাড়াতে পারে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।