অনলাইন ক্লাস: প্রযুক্তির অপব্যবহারে ফাঁদে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা!
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রকোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের শিক্ষাখাত। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় সবকিছু স্বাভাবিক হলেও ১৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবে খুলবে তারও নেই সঠিক নিশ্চয়তা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচালে শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা৷
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু তাতেও নেই আশানুরূপ সাফল্য। সম্প্রতি দেশে বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।শুরুর দিকে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকলেও সময় গড়াতেই তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। পড়াশোনা বিমুখ অধিকাংশ স্কুল শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের নামে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সময় কাটাচ্ছে।
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে একঘেয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের৷ একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ অন্যদিকে বন্ধ কোচিং সেন্টার। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের সময় কাটাচ্ছে ঘরবন্দি থেকে। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরণের শঙ্কা। করোনায় ঘরবন্দি এসব শিক্ষার্থীদের উপর প্রযুক্তিগত নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন বাড়ছে।
করোনায় অনলাইন ক্লাসের নামে পরিণত বয়সের আগেই স্মার্টফোন হাতে পেয়েছে অনেক স্কুল পড়ুুৃয়া শিক্ষার্থী। কিন্তু অনলাইন ক্লাসেরর নামে এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই ইন্টারনেটের অপব্যবহারে লিপ্ত৷ করোনার আগে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা, পরীক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও করোনার প্রকোপে ঘরবন্দি অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখন প্রযুক্তির নেতিবাচক আসক্তিতে মগ্ন।
তথ্য মতে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে রাখতে নিয়মিত এসাইনমেন্ট দেয়া হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এসব তার উত্তর গুগল থেকে বের করে কিংবা ইউটিউবের ভিডিও দেখে দেখে লিখছে। এছাড়া অনলাইন ক্লাসের নামে স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে আছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। দিনের অধিকাংশ সময় ফেসবুক, গেমিংয়ের পেছনে ব্যয় করছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছে, প্রযুক্তি যতটুকু না পড়াশোনার জন্য ব্যয় করছে তার চেয়ে অন্য কাজে বেশি ব্যয় করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে খেলাধুলা বিমুখ শিক্ষার্থীরাদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন চরম হুমকির মুখে।
এ প্রসঙ্গে এক স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে সন্তানদের নেই পড়াশোনা ও পরীক্ষার চাপ। ফলে অনলাইন ক্লাস দিয়েও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি ফিরছে না। বিপরীতে হাতের কাছে স্মার্টফোন পেয়ে ছেলেমেয়েরা দিনের অধিকাংশ সময় ইন্টারনেটে ব্যয় করছে। বন্ধুদের সাথে চ্যাট, ইউটিউব, ফেসবুক, গেমিংসহ প্রযুক্তির নানান দিকে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এটি নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে ব্যপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সন্তানদের প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরেক অভিভাবক বলেন, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকে সন্তানদের খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না৷ বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা৷ সন্তানদের আবদার মেটাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে হাতে তুলে দিতে হচ্ছে স্মার্টফোন। স্মার্টফোন ব্যবহার করেই অধিকাংশ সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যদি আরো দীর্ঘ হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে ।
আরেক স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, প্রযুক্তির ভালো খারাপ উভয় দিক আছে। করোনাকালে শিক্ষাজীবন প্রযুক্তিগত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ভালো দিক ও খারাপ সম্পর্কে বুঝাতে হবে৷ অনলাইন ক্লাসের নামে প্রযুক্তির অপব্যবহারে শিক্ষার্থীরা যেন সাইবার অপরাধসহ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সব অভিভাবকদের সুদৃষ্টি দিতে হবে৷
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. আনোয়ারা আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেহেতু কোভিড একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সেক্ষত্রে পুরো বিশ্ব জুড়েই এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভেতর এক ধরণের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে করোনার এমন দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের ধারার রাখতে অভিভাবকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনার বাইরে প্রযুক্তিগত নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ এছাড়া শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতেও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে৷