করোনা রোগীদের বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটছেন সুহানা
রাজধানীর পান্থপথের বাসিন্দা শেখ সুহানা ইসলাম। শুরুতে তিনি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হলেও সেটি ছেড়ে দিয়ে গত কয়েক বছর স্বেচ্ছাসেবী নানা কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পর থেকে গত এক বছরে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কোভিড-১৯ রোগীর জন্য তিনি অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন।
মহামারির শুরু থেকে সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করছিলেন তিনি ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে এসে রোগীদের জন্য বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু করেন তিনি। সুহানা বলেন, ‘যারা হাসপাতালে যেতে পারছিল না সেই সব রোগীদের আমরা অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া শুরু করলাম।’
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পর থেকে বাংলাদেশের হু-হু করে বেড়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম। যে সিলিন্ডার এক সময় পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যেতে সেটির দাম গিয়ে ঠেকেছে ১৫ হাজার টাকায়। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ করার খরচও বেড়ে গেছে তিন গুন।
সুহানা ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা জোগাড় করে এ পর্যন্ত ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত স্কুটিতে রাত-বিরাতে রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটেছেন শেখ সুহানা ইসলাম। শতাধিক রোগীকে এই সেবা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একটা সিলিন্ডার যখন একটা বাসায় যায় তখন সেটা ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করলেই কাজ শেষ হচ্ছে না। অনেকের এক সপ্তাহ কিংবা ১৫দিনও লাগে। অনেকে ফোন করে প্রতিদিন। কিন্তু সিলিন্ডার কম হওয়ায় আমরা সবাইকে এ সেবা দিতে পারি না।’
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ যখন আঘাত করে তখন অনেকেই হাসপাতালে কোন জায়গা পাননি। অথচ শ্বাসকষ্ট নিয়ে তীব্র যাতনায় বাড়িতে কাটাতে হয়েছে। তাদের একজন ঢাকার শহিদবাগের শারমিন ভুঁইয়া শিপা। করোনা আক্রান্ত হওয়ার শেখ সুহানার সরবরাহ করা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল তার জন্য এক আশীর্বাদ।
শিপা বলেন, ‘একদিন রাতে আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৫ হয়ে গেল। তখন আমি বাসায় থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাপোর্ট নিয়েছি। একঘণ্টা সাপোর্ট নেবার পরে আমার স্যাচুরেশন ঠিক হয়েছে। এই সার্ভিসটা ঘরে বসে যে পেয়েছে একমাত্র সে-ই জানে এটা কতটা দরকার।’
করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রাত-বিরাতে ছুটে চলা একজন নারীর জন্য সহজ কাজ নয় বাংলাদেশের সমাজে। শহরের অধিকাংশ পরিবার যখন করোনা সংক্রমণের আশংকায় নিজেদের নানা কাজ থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল তখনও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে চলেছেন শেখ সুহানা।
বিষয়টি নিয়ে তার পরিবারের মধ্যেও প্রথম দিকে উদ্বেগ ও অস্বস্তি ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা কেটে গেছে। বলছিলেন শেখ সুহানার ছেলে। তিনি বলেন, ‘এ কাজটা করতে অনেক সাহস লাগে। অনেকে ভয় পাবে এই কাজ করতে। আমরা মা এই কাজটা ভালোভাবে করেছ। প্রথম দিকে মনে হতো যে সবাই ঘরের ভেতরে আছে আর উনি প্রতিদিন বাইরে যাচ্ছেন। তখন একটু খারাপ লাগতো। তারপর কয়েকদিন পরে আর লাগেনি।’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে শেখ সুহানা ইসলামের মতো আরো কিছু ব্যক্তি ও সংস্থা রোগীদের জন্য বাসায় অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করেছেন। রোগীদের অনেকেই বলছেন, যখন হাসপাতালে কোন সিট খালি নেই, তখন সে কঠিন দু:সময়ে এই সেবা অনেকের জীবন বাঁচিয়েছে। বিবিসি বাংলা।