ক্ষমতা পেয়ে লাগামহীন উপাচার্যরা, শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে অপরাধ

সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেক উপাচার্য
সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেক উপাচার্য  © ফাইল ফটো

আগেই সীমাহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে আলোচনায় ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহান। তবে কার্যকর বিচারের মুখোমুখি হননি তিনি। ফলে বরাবরেই মতোই বেপরোয়া ছিলেন তিনি। নিজের শেষ কর্মদিবসেও সে ধারা বজায় রাখেন এম. আব্দুস সোবহান। এদিন ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছেন তিনি।

শুধু তিনিই নন, এ ধরনের বিতর্কে জড়িয়েছেন আরও কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। একচ্ছত্র ক্ষমতার সুযোগে তারা বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন। এমনকি অধ্যাদেশ ও প্রচলিত আইন এবং নিয়ম-নীতিরও তোয়াক্কা করছেন না তারা। এতে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, অন্তত ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইতোমধ্যে আরও ১৬ উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ অভিযোগই স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগে অনিয়মের। এছাড়া নির্মাণ ও কেনাকাটায় অনিয়মসহ  আর্থিক দুর্নীতি রয়েছে। নিজেরে স্ত্রী-সন্তান, জামাতাদেরও নিয়োগ দিয়েছেন কয়েকজন।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগের ঘটনা বাড়ছে। এর প্রধান কারণ, তদন্তে প্রমাণিত হলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত নেই। যেহেতু এ পদে নিয়োগ দিতেই হবে, সেজন্য কারোর বিরুদ্ধে প্রমাণিত অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে পরের জন সে দৃষ্টান্ত মনে রাখেন।

ইউজিসি সূত্র জানায়, এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে। গত ৭-৮ মাসে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে শেষ কর্মদিবসে তিনি ১৪১ জন নিয়োগ দিয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার তদন্ত কমিটি করে। এছাড়া ওই কার্যক্রম স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ২০০৯ সালের পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ইউজিসি তদন্ত করে।

অভিযুক্তদের মধ্যে ইবির ভিসি অধ্যাপক আবদুল হাকিম ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আবদুল জলিল মণ্ডলকে অপসারণ করা হয়েছিল। আন্দোলনের মুখে বিদায় হন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। তাদের মধ্যে জলিল মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) মামলা হয়েছে। আর কেউ বিচারের মুখোমুখি হননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই দশকে অসংখ্য উপাচার্যের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ইউজিসি তদন্তও করে। কয়েকজনকে অপসারণ করা হলেও কাউকে ফৌজদারি মামলা বা বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমলেই কেবল তদন্ত করা হয়।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে অপসারণ হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাও হচ্ছে না। এমনকি তদন্ত করতে গেলে ক্ষমতা দেখিয়ে কমিটির সদস্যদের ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলেও অভিযোগও আছে। ফলে তদন্ত কার্যক্রমও অনেক সময় থমকে যায়।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নিয়োগ ও আর্থিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগই বেশি বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ