শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ১৪ মাস

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ  © ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে ছুটি চলছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা হলো, আগামী ২৩ মে স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নির্দেশ ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ঘোষিত সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কি না, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের গত মার্চে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী ১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল প্রায় এক বছর ধরে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ক্ষতি বহুমাত্রিক। শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা ভুলে যাচ্ছে। বড় ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠছে। পরীক্ষা নিতে না পারায় শেখার দক্ষতা যাচাই হচ্ছে না।

সরাসরি শিক্ষার ক্ষতির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সামাজিক ও মানসিক প্রভাবও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঝরে পড়া বাড়ছে। কিশোরীদের অনেকে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ে কর্মজীবনে প্রবেশে পিছিয়ে যাচ্ছেন।

নতুন বছরের চার মাস হয়ে গেলেও কত শিক্ষার্থী এবার প্রাথমিকে ভর্তি হলো, কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ল—এসব তথ্য সরকারের হাতে নেই। একই চিত্র মাধ্যমিকেও।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তির তথ্য চাওয়া হয়েছে। পেলে বোঝা যাবে।

বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিকের এবং ৭ এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে না।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে’ গত জানুয়ারিতে বলা হয়, দূরশিক্ষণের (সংসদ টিভি, রেডিও, অনলাইন ও মোবাইল) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ।

অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসই হয় না। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে সরকারি বিদ্যালয়গুলো। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আরও পিছিয়ে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আরও বিপাকে পড়েছে। সরকার এ বছরের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে ৬০ দিন ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮০ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কিন্তু বিকল্প কী হবে, তা–ও বলা হচ্ছে না।

জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম পুনর্বিন্যাসের কাজ করলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকেরা শিখন কার্যক্রম চালাবেন বলে একটি আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। মাধ্যমিকে অবশ্য সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা চলছে।

এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায় এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে সরকারের চিন্তা কী, জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির পরিকল্পনাই বহাল রয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখল, তা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সেটি করার পর বোঝা যাবে শিক্ষার্থীদের কতটুকু এবং কোথায় ক্ষতি হয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ