টিকা ছাড়াই ক্লাসে ফিরতে হবে শিক্ষার্থীদের!
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ২৩ মে থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। পূর্বের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ক্লাসে ফেরানোর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার যে উদ্যোগটি নেয়া হয়েছিল সেটিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে স্বল্প সময় বাকি রয়েছে; এ ব্যবধানে তাদের সবাইকে টিকা দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে এখন অনিশ্চয়তা।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। সেই হিসাবে ‘ক্লাসে ফেরানোর আগে সবাইকে সুরক্ষিত করা হবে’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এ আশ্বাস ভেস্তে যেতে বসেছে। তবে সর্বশেষ কতজন শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছে সে হিসাব প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকলেও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন তার কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকার তথ্য আমাদের কাছে আপডেট নাই। কয়েকটি জেলায় কথা বলে দেখেছি, তারা যে তালিকায় পেয়েছিল তাদের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সমস্যা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সবাইকে টিকা দিতে পারিনি। কারণ সবার এনআইডি নাই। কতজন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই।
তথ্যমতে, দেশে গত ২৬ এপ্রিল (সোমবার) থেকে চলশান প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োজ বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত প্রথত ডোজের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ শুরু করে সরকার। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকার সংস্থান করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে চলতি মাসে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু করে সরকার। এতে প্রয়োজনীয় টিকার মজুদ না থাকায় প্রথম ডোজের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের নিচে হলেও টিকা আওতায় থাকতে পারছেন তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের যারা ১৮ বছরের নিচে তাদেরকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়ারও সুযোগ নেই।
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল সংলাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী ২৩ মে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে। আমাদের আগের ঘোষণা অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত ছিল তা এখনো বহাল রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বাস্তবতায় ২৩ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে টিকা ছাড়াই শ্রেণীকক্ষে যেতে হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবির মার্কেটিং বিভাগে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আগে টিকার যে সম্ভাবনাটা ছিল সেটি যদি অভ্যাহত থাকতো তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে ক্লাসে ফেরানো অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। মাননীয় মন্ত্রী সে জায়গা থেকেই হয়তো বলেছেন।
অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, এটি কিন্তু দু’চারটি কথা না। দেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শুরুতে টিকার গতিটা থাকলে আমরা হয়তো আমাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্প করে টিকা কার্যক্রম করতে পারতাম। কিন্তু এখন অপ্রাপ্যতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় হলো নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়া ছাড়া কিন্তু সেকেন্ড ডোজ নেওয়াও সম্ভব না। সেক্ষেত্রে বলাই যায়, এ স্বল্প সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অনেকটা একই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, যে সময়টুকু বাকি আছে এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারা কিংবা না পারা এটা সংশ্লিষ্টদের বিষয়। তবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নিশ্চিত না করে আবাসিক হল খুলতে চাই না। শ্রেণি পাঠদানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেই সামগ্রিক সিদ্ধান্ত আসবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।