১৩ মার্চ ২০২১, ১০:৫৯

প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের ভুলে নিয়োগ পেয়েও বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকেরা

  © ইন্টারনেট

অনুমতি ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা পাঠানোর দায়ে মতিহার থানার কোর্ট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৪ মার্চ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের উপসচিব মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত পত্রে সাজ্জাদ আলীর তিন মাসের এমপিও স্থগিত করতে মাউশি মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়াও একই দিনে আরও তিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককের এমপিও তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার চর হাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, বগুড়ার ধুনট উপজেলার ছাতিয়ানি রোকেয়া ওবেদুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোকছেদ আলী এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার ছোট মেরুং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান। তারা প্রত্যেকেই ভুল চাহিদা পাঠিয়ে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করিয়েছেন। এই শিক্ষকরা এখন বিপাকে পড়েছেন।

সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ১২ জুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২৪ (খ) ধারায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কিছু পদ যুক্ত করা হয়। নতুন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এসব পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বানুমতির পৃথক আদেশ জারির আগেই রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার কোর্ট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদ আলী তার বিদ্যালয়ে পদ শূন্য দেখিয়ে 'জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে চাহিদা পাঠান। যার ফলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনটিআরসিএ পরীক্ষা নিয়ে এ পদে লোক বাছাই করে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে যিনি নিয়োগ পান, সেই শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। এজন্য পাচ্ছেন না বেতন-ভাতা। কারণ এই পদের জন্য সরকারের অনুমতিই নেই। এভাবে অনুমতি ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা পাঠানোর কারণে মতিহার থানার কোর্ট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে একই দায়ে সারাদেশের মোট ৩৮ জন প্রতিষ্ঠানপ্রধানের তিন মাসের এমপিও কেটে রাখার জন্য মাউশি অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, শিক্ষক নিয়োগের ভুল তথ্য পাঠানোয় এ রকম মোট ৯০৭টি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের এমপিও পুরোপুরি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষকের শূন্য পদের ভুল চাহিদাপত্র দেওয়ায় জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা প্রথমে কাজে যোগ দিতে না পেরে পথে পথে ঘুরেছেন। এখন যোগ দিলেও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। সংশ্নিষ্ট স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে অফিসিয়ালি শিক্ষকের কোনো পদ শূন্য না থাকলেও ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এনটিআরসিএতে শিক্ষকের চাহিদা জানিয়েছেন। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই হয়েই তা এনটিআরসিএতে এসেছিল। তবুও তাতে অজস্র ভুল হয়েছে। আর এই ভুলের খেসারত দিচ্ছেন সহস্রাধিক চাকরিপ্রার্থী। মেধার লড়াই করে জয়ী হয়েও তারা চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। কারণ ওই সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের কোনো পদ শূন্য নেই। তাই এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে সংশ্নিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে গেলে এই প্রার্থীদের সেখানে যোগদান করতে দেয়নি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আবার, অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হয়েও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে। এতেও নিয়োগ পেয়ে অনেক শিক্ষক কাজে যোগ দান করতে গিয়ে দেখেন সেটি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে তারা সরকারি বেতন পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে শূন্য পদের ভুল চাহিদার বলি হয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না অনেক শিক্ষক।

এনটিআরসিএ থেকে জানা গেছে, ভুল চাহিদা দেওয়ায় সারাদেশের ৯০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য দেওয়ায় এক হাজার ১৭৩ জন নিয়োগপ্রার্থী নিয়োগ নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন। অন্তত ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও পদে শিক্ষকের চাহিদা দিয়ে এখন সেসব পদ আসলে নন-এমপিও বলে ঘোষণা করেন। এ কারণে ৩৫ জন চাকরিপ্রার্থী এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এসব তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ। এসব জটিলতার জন্য দায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রধানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগে যেসব প্রতিষ্ঠানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে আমরা সেগুলোর তালিকা করেছি। ইতোমধ্যে তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভুল তথ্য দেওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে আবার তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের যোগদান করানোর পর তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।