কাঠগড়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডজনখানেক উপাচার্য

বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চলছে
বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চলছে  © টিডিসি ফটো

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংস্থাটি বলছে, এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউজিসির তদন্তের আলোকে অভিযুক্তি উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, তার তত্ত্বাবধানেই এ পর্যন্ত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। আর বাকিগুলোও চলে আসবে। ইউজিসির অন্য সদস্যদের কাছে আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যদের নিয়ে তদন্তের কাজ চলছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ শিক্ষকদের। সর্বশেষ বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প শেখ হাসিনা ছাত্রী হল, ড. ওয়াজেদ রিচার্জ অ্যান্ড ট্রেনিং ইন্সিটিটিউট ও স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজে কলিম উল্লাহসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মতিউর রহমান বলেন, ‘ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে যেটি প্রমাণ হয়েছে সেটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির একটি খণ্ড চিত্র। শুধুমাত্র এগুলোই নয়, যেখানেই হাত দেওয়া যাবে, সেখানেই এই কলিম উল্লাহর দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপাচার্য কলিম উল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘কাজ শেষে হাতে অবশিষ্ট যে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ছিল, তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে আর্থিক কোন অনিয়ম বা কোন ধরনের ত্রুটি আমাদের পক্ষ থেকে হয়নি।’

ইউজিসির তথ্য বলছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খান, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনসহ চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত চলছে।

এছাড়া নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ইউজিসির একটি তদন্ত দল তদন্তে গেলে উপাচার্যপন্থী বলে পরিচিত কর্মকর্তা ও বহিরাগত যুবকদের মহড়ায় ভীত হয়ে তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আবদুস সাত্তারের বিরুদ্ধেও। এরমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

ইউজিসি সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যথাযথ তদন্ত করে এর ফলাফলসহ আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেই। মন্ত্রণালয় সে ফলাফল অনুযায়ী এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। উপাচার্যের নিয়োগ দেওয়া ও তাঁদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আচার্যের। তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) সাচিবিক কাজটি করে থাকে। ফলে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে এসব বিষয় অবহিত করার মূল দায়িত্বও তাদের।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যদের দুর্নীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘উপাচার্যরা যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে?’

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয়সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপ থাকে। এজন্য অনেক সময় উপাচার্যরা নিয়োগসহ আর্থিক সংশ্লেষ আছে, এমন কর্মকাণ্ডে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের শিকার হন। তবে এটাও ঠিক যে, কিছু উপাচার্য নানা ধরনের অন্যায়-অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।’

অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অভিযোগ আসছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এর মূল কারণ হচ্ছে বিচারের অভাব। যদি অন্যায় বা বেআইনি কর্মের বিচার না হয়, তবে অপরাধ বাড়াটাই স্বাভাবিক। আগে অ্যাকশন না হলেও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সহযোগিতা করছেন। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হবে।’