জোরালো হচ্ছে ৪১তম বিসিএস পেছানোর দাবি, পরীক্ষার পক্ষেও অনেকে
করোনাকালের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৯ মার্চ। ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রায় পৌণে পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। এছাড়া এ বিশাল কর্মযজ্ঞে আরও অন্তত তিন থেকে চার লাখ মানুষ নানাভাবে জড়িত থাকবেন। করোনাকালে ভ্যাকসিন নিশ্চিত না করে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ থাকায় অনেকে বিপাকে পড়বেন বলে দাবি করেছেন। বিশেষত মেয়েরা বেশি বিপাকে পড়বেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বিসিএস প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালে পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে তারা দ্বিধায় রয়েছে। একটি অংশ মনে করছেন, বিসিএস পরীক্ষা হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘদিন বড় কোনো চাকরির পরীক্ষা না হওয়ায় বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে চান তারা। এ নিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেদের মতামতও জানিয়েছেন।
তবে অপর অংশ মনে করছেন, করোনাকালে এত বড় আয়োজন করা ঠিক হচ্ছে না। এর পক্ষে তাদের যুক্তি, এখনো সবাইকে ভ্যাকসিন না দেওয়ায় সংক্রমণের বড় ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ থাকায় ঢাকার মতো বড় শহরে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হবে তাদের।
তারা বলছেন, অনেক ছেলে ব্যবস্থা করতে পারলেও বেশি বিপাকে পড়বেন মেয়েরা। এ কারণে সবার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে এবং হল খোলার পর ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে তারা।
এ বিষয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থী তানসেন বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন এখনো নিশ্চিত হয়নি। হলও বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিসিএস নেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। এছাড়া করোনাকালে বাড়িতে থাকায় অনেকে ঠিকমতো প্রস্তুতিও নিতে পারেনি। সে কারণে এখনই পরীক্ষা না নিয়ে হল খুলে ও ভ্যাকসিন দেওয়ার পর বিসিএস হলে সবার জন্যই ভালো হবে।’
তবে রুবেল হাওলাদার নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘বিসিএসটা হয়ে যাওয়ায় ভালো। এটি হয়ে গেলে আমরা অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে পারবো। প্রিলিমিনারির কারণে ৪০তম বিসিএসের ভাইভার জন্যও প্রস্তুতি নিতে পারছি না। এজন্য পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে আমি। এ বিষয়ে পিএসসি যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছি।’
অপরদিকে বিসিএস পরীক্ষা আরও পরে নেওয়ার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী শারমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘এখনই পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। হল বন্ধ, এখন পরীক্ষা হলে মেয়েরা কোথায় থাকবে? অনেকে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারবে না। এছাড়া এত মানুষের সমাগম করাও ঠিক হবে কি? এ কারণে পরীক্ষা অন্তত হল খোলার পরে এবং ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে হওয়া উচিৎ।’
এদিকে করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে চান না বিসিএস প্রত্যাশীদের একাংশ। এজন্য তারা আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছেন। আজ বৃহস্পতিবার নিজেদের দাবি তুলে ধরতে শাহবাগে মানববন্ধন করবেন তারা।
এ পক্ষের পরীক্ষার্থীরা বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হয়নি। যারা পরীক্ষা দেবেন তাদের ভ্যাকসিনও দেয়া হয়নি। ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছেন চার লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী। পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবক মিলিয়ে প্রায় ৭-৮ লাখ মানুষের সমাগাম হবে। এতে করে অনেকেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এরমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকে পরীক্ষাও দিতে পারবেন না।
এছাড়া হল না খোলায় পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়বেন। তাই পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছেন তারা। পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগে মানবন্ধন করবে বিসিএস প্রত্যাশীরা। দুপুরে আড়াইটা থেকে তাদের এ কর্মসূচি শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি ৪১তম বিসিএসের তারিখ ঘোষণা করে সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ মার্চ এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
দুই হাজার ১৬৬ শূন্য পদে প্রার্থী নিয়োগ দিতে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এরমধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে ৩২৩ জন, সাধারণ ক্যাডারে ৬৪২ জন, প্রফেশনাল ও টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৬১৯ জন, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৮৯২ জন, সহকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৩ জনসহ মোট দুই হাজার ১৬৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।