‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অপ্রকাশিত থাকা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অপ্রকাশিত থাকাটা জাতীয়ভাবে আমাদের ভুল ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। যারা বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। জাতীয় প্রেসক্লাব ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘‘১৯৪৮ সালে ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন সংগঠিত করার কারণেই ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৫ মার্চ মুক্তি লাভ করে পরদিন ১৬ মার্চ ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়, একটানা ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালীনও তিনি কিন্তু বসে ছিলেন না। সেখান থেকেই ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘অনেকে একটি কথা জানেন না, ১৯৫২ সালের পরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কোয়ালিশন সরকার গঠন করার আগ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সেটা কার্যকর করা হয়নি। ৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকার গঠনের পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা সরকারি স্বীকৃতি পায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন, সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণও তখনই শুরু হয়।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণা না করে তার মনে যে স্বাধীনতার কথা ছিল সেটি বলতেন, তাহলে তো স্বাধীনতা আসতো না। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ঘোষণা করে প্রথমে বাঙ্গালির মনন তৈরি করেছেন স্বাধীনতার জন্য। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, ৬ দফার পক্ষে ম্যান্ডেট নিয়েছেন। তিনি জানতেন যে, ৭০ সালে নির্বাচনের পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। কী করতে হবে সেই পরিকল্পনাও তার ছিল। সে অনুযায়ী ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম সংগঠিত করে বাঙালিকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।’
প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ও প্রেস ক্লাবের আন্তর্জাতিক লিয়াজো উপ-কমিটির আহ্বায়ক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলা একাডেমি সভাপতি ড. শামসুজ্জামান খান এবং প্রেস ক্লাবের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল আলম আলোচনায় অংশ নেন। এতে 'বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও বাংলার বিশ্বব্যাপ্তি' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।