১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:১৪

বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক পণ্য মনে করার সময় আসেনি: জ্বালানি উপদেষ্টা

  © সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক পণ্য (প্রাইভেট গুডস) মনে করার সময় এখনও আসেনি। উৎস জ্বালানির দাম বাড়লেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রধানমন্ত্রী সমর্থন করেন না। এটি সরকারেরও নীতি। তাই অল্প অল্প করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিবেচনা করা হয়েছে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা।'

ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফইআরবি) উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউর্সাস এসোসিয়েশনের (বিপ্পা) সহযোগিতায় ‘বিজয়ের ৫০ বছর ও বিদ্যুৎ খাতের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে আজ শনিবার এসব কথা বলেন তিনি।

এতে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, 'বিদ্যুতের সিস্টেম লস অনেক বেশি থাকায় ১৯৯৬ সালে দাতারা বলে দেয়- তোমাদের টাকা দেওয়া হবে না। তখন আমরা আইপিপিতে গেলাম। খুলনা, হরিপুরে বার্জে করে পাওয়ার প্ল্যান্ট এনে স্থাপন করা হলো। এরপর ক্যাপটিভ পাওয়ার পলিসি করা হলো। যদি ক্যাপটিভ তার উদ্বৃত্ত বিক্রি করতে চায় তার ব্যবস্থা করা হলো। এভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি পরিবর্তন করা হয়। তখন কিন্তু সরকারের মধ্যেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৯ সালে দেখলাম বিশ্বব্যাংকের ফর্মুলায় করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইনে দ্রুত কাজ করা সম্ভব না। ফিলিপাইন তখন একটি নির্বাহী আদেশে কাজ করছিল। তখন আমরা বিশেষ আইন করলাম যার কারণে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি অনেক। বিরোধীদল কিংবা মিডিয়াকে খুশি করা না, সাধারণ মানুষকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা তিনি ভাবেন।

ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে জ্বালানি দক্ষতা ও সাশ্রয়ের উপর নজর দিতে হবে। তরল জ্বালানি তেল থেকে আমরা কিছুটা বের হয়ে আসবো। ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমের দিকে যাচ্ছি। এখানে কিছুটা ঝুঁকিও রয়েছে। যেমন রাশিয়া বসে ইউক্রেনের পাওয়ার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা যদি অনুকরণ করি তাহলে পিছিয়ে থাকবো। আর যদি নিজেরা উদ্ভাবনী মেধা প্রয়োগ করি তাহলে এগিয়ে থাকবো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পর সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত সরবরাহ এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সারা বিশ্বেই পরিবর্তন এসেছে। আমাদেরও সেই পরিবর্তনের সঙ্গে থাকতে হবে। প্রথম দফায় ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার ভঙ্গুর বিদ্যুৎ খাতের পুর্নগঠন চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল। তখন সরকার বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। এরপর ২০০০ সালে আবার বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। এতে দেশ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে। তখন লোডশেডিংয়ের কারণে রাস্তায় মিছিল হয়েছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করে। তখনও আমাদের আর্থিক সংকট ছিল, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভঙ্গুর ছিল। কেউ বিনিয়োগ করতে চায়নি। কিন্তু এরপরও সরকারের উদ্যোগে দুই থেকে তিন বছরে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। সরকারের নীতিই বিদ্যুৎখাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, স্বাধীনতার সময় মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বিদ্যুৎখাতের ভিত্তি রচনা করেছিলেন তা নয়। ঘাতকের নির্মমতায় নিহত হওয়ার ঠিক আগে আগে ব্রিটিশ গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডে পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন। যা দেশের জ্বালানির মূল চাহিদা মেটাতে অগ্রনী ভূমিকা রাখে। ২০০৯ সালে ৪৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পেত। এখন দেশে ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। মুজিববর্ষের মধ্যে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ খাতের অর্জন নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। এখন সামনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। কিন্তু মানসম্মত বিদ্যুতের অভাব রয়েছে। সঞ্চালন এবং বিতরণে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রাথমিক জ্বালানি সংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। উৎপাদনের সঙ্গে বিতরণেও বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য ব্যক্তিখাতের অংশগ্রহণের জন্য নীতি নির্ধারনী পর্যায়কে আরো উদার হওয়ার দরকার।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সংগঠন বিপ্পার সভাপতি ইমরান করিম বলেন, গত ১০-১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাত আমূল বদলে গেছে। বেসরকারিখাত এখন দেশের মোট উৎপাদনের ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুন কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শামীম জাহাঙ্গীর।