ফসলের বুননে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকলেন কৃষক আব্দুল কাদির
বিজয় দিবসের আগেই নিজের সরিষা ও লালশাক ক্ষেতকে কৃষক আব্দুল কাদির করে তুলেছেন শৈল্পিক কারুকার্যময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে ৩৩ শতক জমিকে করে তুলেছেন অপরূপ দৃষ্টিনন্দন। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। ফেসবুকেও অনেকে প্রশংসা করছেন তাকে।
আব্দুল কাদির বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষে অনেকে অনেক কিছু করছেন। আমি তো তেমন কিছু করতে পারবো না। কৃষক হিসেবে দেশ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে সরিষা ও লালশাককে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, নৌকা ও শাপলার ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ির পাড়াখালবলা গ্রামের হাজি তারা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির (৪১)। গত ১ ডিসেম্বর পাড়াখালবলা বন্ধুমহল ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে এঁকেছেন বঙ্গবন্ধু, স্মৃতিসৌধ, জাতীয় ফুল শাপলা আর নৌকার প্রতিকৃতি। চারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে।
আব্দুল কাদির জানান, গ্রামের ৩৫ যুবক মিলে গড়ে তোলা ‘বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাব’র সদস্যদের সহায়তায় ৩৩ শতাংশ জমিতে বারি-১৪ সরিষা ও লালশাকের বীজ বোনেন তিনি। বছরের অন্য সময় জমি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। তবে এবার বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন কৃষক আব্দুল কাদির। তার জমিতে সরিষা ও লালশাক বুনে শৈল্পিক কাজটি করেছেন। এজন্য আগামী বছর বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য তার নাম প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হবে।’
এদিকে ফেসবুকে তার শৈল্পিক কাজ প্রশংসায় ভাসছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন সুলতানা লিখেছেন, ‘আশপাশের জমিতে অনেকেই করেছেন রবিশষ্য। কেউ করেছেন মুলা, সরিষা, বেগুন ও শিমসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানসিক ভাবনা ও ভালোবাসার নিদর্শনের রূপ জমিনেই ফুটিয়ে তুলেছেন সৃষ্টিশীল মনের অধিকারী কৃষক আব্দুল কাদির (৪৪)। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, নৌকা, স্মৃতিসৌধ, শতবর্ষ লিখনি ছাড়াও জমিনের চারপাশে ‘লাভ’ চিহ্ন নকশা করেছেন সরিষা ও লাল শাক দিয়ে। কাদির বলেছেন, আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছু করতে পারলাম না। তাই এখন থেকে প্রতিবছর এ মৌসুমে বিজয়ের মাসে আমার এই ক্ষেতটিতে এ ধরনের নকশি একে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করব। মানুষ জানবে, বঙ্গবন্ধুকে কখনো ভাঙা বা মুছে ফেলা যায় না।’
মো. আলি আসিফ নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা মুজিবর্ষের কোনো সরকারি প্রজেক্ট না। কোনো প্রকল্প পরিচালক নেই, ঠিকাদার নেই। একজন কৃষকের নিখাদ ভালবাসা । বিজয়ের মাসে নিজের ফসলী জমিতে বঙ্গবন্ধু, স্মৃতিসৌধ ও নৌকার প্রতিকৃতি।’