১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩৬

জ্ঞান সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে বাংলাদেশ

গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স ২০২০ প্রকাশিত  © টিডিসি ফটো

বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক ২০২০-এ (জিকেআই) ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। তালিকায় স্থান পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। অর্থাৎ জ্ঞান সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় তলানিতে অবস্থান বাংলাদেশের। যা জ্ঞানের অবকাঠামোর দিক থেকে দেশের দুর্বল অবস্থানকেই নির্দেশ করে।

বুধবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশন (এমবিআরএফ) গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্সের (জিকেআই) ২০২০ সালের প্রকাশিত ফলাফলে এ চিত্র উঠে আসে।

যদিও সামগ্রিক স্কোরে ০.৯ পয়েন্ট উন্নতি করে ৩৫.৯ স্কোর অর্জন করেছে বাংলাদেশ, তবুও তা বৈশিক গড় স্কোর (৪৬.৭) পয়েন্টেরও অনেক নিচে।

তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের। গত চার বছর ধরে নিজেদের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে দেশটি। তালিকায় এর পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তারপরেই রয়েছে ফিনল্যান্ড।

মধ্যম মানব উন্নয়নের ২৪টি দেশের মধ্যে ১৯তম অবস্থান নিয়ে গত বছরের মতো একই অবস্থান রয়েছে বাংলাদেশ। তবে উচ্চশিক্ষায় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থান বাংলাদেশের।

সূচকে স্থান পায় দক্ষিণ এশিয়ার ৬টি দেশ। এদের মধ্যে ৪৪.৪ স্কোর নিয়ে সূচকে শীর্ষে আছে প্রতিবেশ দেশ ভারত। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কে দেশটির অবস্থান ৭৫তম। ভারতের চেয়ে মাত্র ২.৩ পয়েন্ট কম নিয়ে দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। যার বৈশ্বিক র‌্যাঙ্ক ৮৭।

আর তৃতীয়, চতুর্থ এবং ৫ম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভুটান, নেপাল এবং পাকিস্তান। এদের স্কোর যথাক্রমে ৪০.৯, ৩৬.২ এবং ৩৫.৯।

তালিকায় তাকালে অবাক করার মতো যে বিষয়টি চোখে পড়ে সেটি হলো, বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র চার বছরের ছোট বয়সী এবং তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে দেশের শীর্ষ প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ২০২০ সূচকে ৬৬তম স্থানে রয়েছে, বাংলাদেশের চেয়ে ৪৬ ধাপ এগিয়ে রয়েছে দেশটি।

সূচকটি সাতটি সেক্টরের অধীনে ১৩৩টি চলকের (ভেরিয়েবল) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো হলো- প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা; প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ; উচ্চশিক্ষা; গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; অর্থনীতি; এবং সাধারণ সহায়ক পরিবেশ।

সূচকে সেক্টরের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান:
সূচকে প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা হলো প্রথম সেক্টর। এটি এমন একটি সেক্টর যা অন্যান্য খাত গড়ে তোলে। এটি জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূলধন এবং একটি সক্ষম শিক্ষার পরিবেশের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সেক্টরে ৪৩.৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭তম।

প্রযুক্তিগত এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। এ স্তরে ৪৯ স্কোর নিয়ে ৬৯তম অবস্থানে বাংলাদেশ।

উচ্চশিক্ষা সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নাজুক। ২৪.১ স্কোর নিয়ে এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম।

গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন খাতে দেশটি ১৬.৪ স্কোর নিয়ে এবং ৯৬তম স্থানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইসিটি সেক্টরে ৪৩.১ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৯৭তম স্থানে রয়েছে। এই সেক্টরগুলি জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং সকল খাতে জ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অর্থনীতি হলো- শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন, সম্পদ অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রধান চালিকাশক্তি। এই সেক্টরে ৩১.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১১৪তম অবস্থানে রয়েছে।

সাধারণ সহায়ক পরিবেশ অন্য ৬টি সেক্টরাল সূচকের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কারণ এই ক্ষেত্রগুলোর সমন্বিত প্রয়াসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এই সূচকে ৪৬.৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১১৫তম স্থানে রয়েছে।