ভাস্কর্য ইস্যুতে নওমুসলিম যুবকের স্ট্যাটাস ভাইরাল
দেশে চলমান ভাস্কর্য বিতর্কের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনায় এসেছেন এক নওমুসলিম।ইতিমধ্যে তার এই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়েছে। তার নাম সত্যজিৎ রায় (২২)। তিনি পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার। মুসলিম হয়ে তিনি তার নাম রেখেছেন মুহাম্মাদ।
রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় থাকেন মুহাম্মাদ। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে তিনি তার পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছেন। স্বনির্ভর এ যুবক ভাস্কর্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্য ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। যেই মূর্তি-ভাস্কর্য বাদ দিয়ে হিন্দু থেকে ইসলামে দাখিল হলাম, আজ সেই মুসলিমই কুরআন হাদিসের বিপক্ষে।’
মুহাম্মাদের প্রোফাইল থেকে গত রবিবার (৬ ডিসেম্বর) দেয়া স্ট্যাটাসটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ৫শ মানুষ মন্তব্য করেছেন এবং ১ হাজারেও বেশি ব্যবহারকারী এটি শেয়ার করেছেন।
মন্তব্যের ঘরে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মুহাম্মাদের এমন কাজের প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন, ‘মুহাম্মাদ ইসলামে এসে এ ধর্মের মর্ম বুঝতে পেরেছেন। বিষয়টি নিয়ে সবার সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।’
মোহাম্মদ নিলয় নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, আপনি সফল আল্লাহ প্রেমিক ভাই। যারা একটা দলের জন্য আল্লাহর আদেশ ভুলে গিয়ে ভাস্কর্য আর মূর্তি প্রেমিক হচ্ছে, তাদের হিসাব আল্লাহ নেবেন। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝদান করুক।
মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন নামে একজনে লিখেছেন, জন্মসূত্রে সবাই মুসলিম। কিন্তু মুমিন বা মুত্তাকী কতজন? নিজেকে মুমিন মুত্তাকী হিসাবে গড়ে তুলুন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে জান্নাতে যাবেন। ইসলামটা আপনার জন্য আদর্শস্বরুপ। সবাই কি করলো সেটা দেখতে যাবেন না। স্টাডি করেন, বেশীরভাগ আলেমদের মতকে অগ্রাধীকার দেন।
তানভীর আহমেদ লিখেছেন, ভাই এদের নামগুলো শুধু মুসলমানদের মত। আসলে এরা ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছে। আল্লাহ এবং রাসূলের যারা বিরোধী, তারা আর যাইহোক মুসলিম থাকে না। আমাদেরকে এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার জান-ই-আলম সরকার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন মুহাম্মদ। ছোটবেলা থেকেই একাডেমিক পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলেন না নওমুসলিম মুহাম্মাদ। কর্মমুখী শিক্ষায় ঝোঁক ছিল তার। সে থেকে পরবর্তীতে এসএসসি পরীক্ষার পর শুরু করেন ফিল্যান্সিং। বর্তমানে তিনি এর মাধ্যমে স্বনির্ভর জীবনযাপন করছেন।
মুহাম্মাদ জানান, তার স্ট্যাটাসটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি বেশকিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে তার ফেসবুকে ব্যবহার করা নাম নিয়ে। তবে ফেসবুক পলিসির কারণে তিনি বর্তমানে নাম পরিবর্তন করতে পারছেন না বলে জানান। এছাড়া এ স্ট্যাটাসটি কাউকে দেখানো কিংবা ভাইরাল হওয়ার কোন উদ্দেশ্য ছিল না তার। তিনি শুধুমাত্র নিজ দায়িত্ব থেকে এটি লিখেছেন।
মুহাম্মাদ চলতি বছরের শুরুতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি মূলত ভারতের ধর্মীয় বক্তা জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবাই তাদের ধর্মগ্রন্থ পরিপূর্ণভাবে পড়ে না। যদি পড়তো তাহলে সবাই দলে দলে ইসলামে দাখিল হতো।
স্ট্যাটাসের বিষয়ে মুহাম্মাদ বলেন, আমি শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। যা আল্লাহ আমার উপর ফরজ করেছেন। তিনি কোরআনে বলছেন, সত্য সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তালার। আমি উছিলা মাত্র, আমাকে নেকি অথবা গুনাহ অর্জন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এখন আমি কি করছি তা দ্বারা আমার বিচার হবে। না হলে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তরভুক্ত হতে চাই না।