নিম্নমানের ফতোয়া দিয়ে নিজেদের ছোট করবেন না: শিক্ষা উপমন্ত্রী

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল  © ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী আলেমদের উদ্দেশে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, আমরা আপনাদের সম্মান করি। কিন্তু নিম্নমানের ফতোয়া দিয়ে, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে নিজেদের ছোট করবেন না। কোথায় কি ছবি উঠবে, কোথায় কোন ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে- সেটা দেখা আপনাদের কাজ নয়।

আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে জেলা পরিষদের সদস্য আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহিদা আখতার জাহানের লেখা ‘অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনা’ বইয়ের মোড় উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের নারীসমাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের পিছিয়ে দেওয়ার জন্য তথাকথিত কিছু আলেম নামধারী ব্যক্তিরা উদ্ভট, উদ্ভট কথা সামনে আনছেন। আমরা যদি তাদের কথায় আপস করে ফেলি তাহলে কি হবে? পৃথিবীর যেসব রাষ্ট্র তাদের কথায় আপস করেছে তাদের অবস্থা আজ আমরা দেখছি। অথচ উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে দেখি- যত উন্নত দেশ, তার তত উন্নতমানের মুফতি এবং আলেম। তারা আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক সমাজে কিভাবে চলতে হবে, দ্বীনে ইসলামের কিভাবে চর্চা করতে হবে- সেটা নিয়ে গবেষণা করে পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।

কিছু কিছু আলেম নিম্নমানের ফতোয়া দিচ্ছেন মন্তব্য করে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মানুষকে পবিত্র করার জন্য কাজ করুন। মানুষকে অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করুন। যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ-এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলুন। গুণগত কাজ করুন। ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা না করে আপনারা সৃষ্টিশীল এবং সমাজ বিনির্মাণের জন্য, মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য কাজ করুন। এতে আলেম হিসেবে আপনাদের প্রতি আমাদের সম্মান অনেক বেড়ে যাবে।

“কিন্তু আপনারা যদি যুগের প্রয়োজনীয়তার বাইরে গিয়ে অপ্রয়োজনীয়-অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন, আপনারা যদি বলেন- মা বোনেরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না, চাকরি করতে পারবে না, টেলিভিশন দেখতে পারবে না...। এর অংশ হিসেবেই আপনারা এখন ভাস্কর্য আর মূর্তি নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন। এগুলো করে নিজেদের ছোট করবেন না। আলেম সমাজকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই, তারা আমাদের সাথে থাকবেন, সমাজের সাথে থাকবেন, প্রগতির সাথে থাকবেন, এগিয়ে যাওয়ার সাথে থাকবেন।”

রাজনৈতিক শক্তির ক্রীড়নক হয়ে কিছু আলেম কাজ করছেন অভিযোগ করে নওফেল বলেন, দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার যে রাজনৈতিক শক্তি, তাদের ক্রীড়নক হয়ে, হাতিয়ার হয়ে কেউ কেউ যে আলোচনা সমাজ থেকে চলে গেছে সেটাকে আবার সামনে আনছেন। তাদের উদ্দেশে বলব, দয়া করে ব্যবহার হবেন না। আপনাদের কাজ আধ্যাত্মিক কাজ। এই কাজের জন্য আমরা আপনাদের অবশ্যই সম্মান করব। কিন্তু কোথায় কি ছবি উঠবে, কোথায় কোন ভাস্কর্য নির্মাণ হবে- সেটা দেখা আপনাদের কাজ নয়। যেটা আপনাদের কাজ সেটা আপনারা করবেন। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যারা আছেন, তারা তাদের কাজ করবেন। আপনারা পুলিশের কাজ করবেন না, পুলিশ আপনাদের কাজ করবে না।

আলেম সমাজকে পিছিয়ে থাকার চিন্তা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় ছবি না তোলার কথা আমাদের দেশে বলা হতো, কিন্তু এখন ছবি না তুললে আপনি হজ্বে যেতে পারবেন না। সৌদি আরবের সরকার একটি চ্যানেল বানিয়েছে, সেখানে সারাদিন কাবা শরীফের তাওয়াফ হচ্ছে-সেটা দেখাচ্ছে। একসময় এরা বলেছিল যে-টেলিভিশন দেখা যাবে না। এই ধরনের পিছিয়ে থাকার চিন্তাভাবনা না করে আপনারা আমাদের তরুণ সমাজকে বলেন, মেয়েদের-মায়েদের সম্মান করতে। নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, ছোট ছোট বাচ্চারা বলাৎকার হচ্ছে- এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেন। আপনারা বলেন যে, এগুলো হারাম। মানুষকে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার জন্য আপনারা বলেন যে, চুরি-দুর্নীতি করলে হাসরের ময়দানে জবাব দিতে হবে। মানুষকে পবিত্র করার কাজ করেন। অপ্রাসঙ্গিক কাজ করে নিজেদের ছোট করবেন না, আমাদের ছোট করবেন না। আমরা আপনাদের সম্মান করি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম এবং লেখিকা শাহিদা আখতার জাহান বক্তব্য রাখেন।


সর্বশেষ সংবাদ