০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:১৫

মুক্তিযুদ্ধের মোড় ঘোরানো তারিখ ৩ ডিসেম্বর

  © ফাইল ফটো

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নয় মাসের রক্তাক্ত ইতিহাসে এক মোড়-ঘোরানো তারিখ ৩ ডিসেম্বর। প্রত্যক্ষ লড়াইয়ের পরিণতি নির্ধারক দিন। সেদিন পাকিস্তান ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলোতে বোমাবর্ষণ ও পশ্চিম সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ শুরু করলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

সেই সঙ্গে সূচিত হয় পূর্ব রণাঙ্গনে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ-তৎপরতার চূড়ান্ত অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। এই দিন নতুন মাত্রা পায় বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম।

একাত্তরের এই দিনে কলকাতায় অবস্থান করছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। সে সময় ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বিমান হামলা চালায় পাকি বাহিনী। রাতে দিল্লীতে ফিরে ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেন ইন্দিরা গান্ধী।

শুরু হয় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ। ভারতের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথবাহিনী তৈরি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে যায় বীর বাঙালী। একাত্তরের সেই দিনটির কথা স্মরণ করছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হেদায়ুতেল বারী।

৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নবগঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে বিমান যুদ্ধের সূচনা করে। এদিন কুমিল্লায় মেজর আইন উদ্দিনের নেতৃত্বে ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিয়াবাজার দখল করে নেয়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন।

নোয়াখালীতে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে সোনাইমুড়ি মুক্ত হয়। মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মাইজদীতে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। রংপুরের পলাশবাড়ীতে ১২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে।

৩ ডিসেম্বর তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিবে তারা। অন্যদিকে তখন মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় পাক হানাদাররা দিশাহারা। দেশে সব অঞ্চলেই বিজয়ের বেশে একের পর এক এগিয়ে যেতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।