০৭ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৫৭

ফ্রান্সে আশ্রয় পেতে ইসলাম নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিতেন এই তরুণী

রেইলি এবং তার টুইটার পোস্টের কিছু অংশ  © সংগৃহীত

ফ্রান্সের অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে দেশে বসে ইসলাম ধর্ম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিতেন ১৯ বছর বয়সী তরুণী ইশরাত জাহান রেইলি। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) রাতে র‌্যাব-৪ -এর একটি দল মিরপুরের দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করে। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩ বছর যাবত ফেসবুক ও টুইটারে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে গত ২ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয় তার। এরপর ৩ বছর বয়সী ছেলে সন্তান নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাজধানীর দারুসসালাম এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন রেইলি। কমিউনিটি পুলিশে নিম্ন পর্যায়ে চাকরিও ছিল তার।

সম্প্রতি ফ্রান্সে ধর্মীয় অবমাননার ইস্যুতে যখন পুরো বিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে, সে সময় রেইলি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রেইলির ৭টি আইডি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তার একটি আইডি নিষ্ক্রিয় করা হলে, আরেকটি আইডি খুলে সে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট অব্যাহত রাখে। এভাবেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে ‘চোর-পুলিশ’ খেলছিল এই বেপরোয়া তরুণী।

জানা গেছে, খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয় ইশরাত জাহান রেইলির। এইসএসসি শেষ করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি রেইলি। তার প্রাক্তন স্বামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আর বিয়ে করেননি রেইলি। তবে একাধিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে এই তরুণীর বিরুদ্ধে।

উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। যে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পথ সুগম হয়।

ইসরাত জাহান রেইলি সে পথই অনুসরণ করছিলেন। তিনি যখন ফেসবুকে একের পর এক ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে তার ফেসবুক আইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম হয়। তবে ৩২ হাজার ফলোয়ার সম্মিলিত তার টুইটার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করতে টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালেও সাড়া মিলেনি। এমনটি কেবল রেইলির ক্ষেত্রে নয়, অন্যদের বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনুরোধ জানালে ফেসবুক তা আমলে নেয়। কিন্তু টুইটার কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করছে না, র‌্যাবের পক্ষ থেকে তাই জানানো হয়।

রেইলির টুইটারে অসংখ্য বিদেশিসহ ৩২ হাজার ফলোয়ার রয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট কেবল রেইলি নয়, তার মতো এমন একাধিক লোকজন রয়েছেন, যারা নিয়মিত উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে আসছেন। তাদের আটক করতে তৎপরতা চালাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দারা।

ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে দেশ বিদেশে ধর্ম অবমাননার পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে রেইলিকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব-৪ এর এসআই রাসেল মন্ডল বাদী হয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গতকাল শুক্রবার (৬ নভেম্বর) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮, ২৯ এবং ৩১ ধারায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৬। মামলাটি তদন্ত করছে দারুসসালাম থানা পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, এই মামলায় রেইলিকে আজ শনিবার (৭ নভেম্বর) ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, রেইলি তার নিজের নামে ৭টি ফেসবুক আইডি, ২টি ব্যক্তিগত ব্লগ ভিত্তিক ফেসবুক পেজ এবং টুইটার আইডি থেকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করে আসছিলেন। তার এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে অ্যাসাইলাম পেতে এ ধরনের উগ্র ও উস্কানিমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে আসছিলেন।