জমে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং  © ফাইল ফটো

ঘড়ির কাটা তখন বেলা সাড়ে ১১ টা। রাজধানীর ফার্মগেটের ইউসিসি কোচিং সেন্টারের অভ্যন্তরে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর ভিড়। যাদের চোখে-মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আকাঙ্ক্ষা প্রতীয়মান। নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ইউসিসি এমন আশা নিয়ে করোনার মধ্যেও তাদের এই আনাগোনা। শুধু ইউসিসি নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতমান উদ্ভাস, ফোকাস, ইউনিএইড কোচিং সেন্টার— সবার চিত্র প্রায় একই।

প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি। তবে এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। করোনার কারণে এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ঘোষণা আসায় আবারও পড়ার টেবিলে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পড়ালেখার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের এখন একমাত্র ভরসা কোচিং সেন্টার। এছাড়া ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতিতে কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ শিক্ষার্থীরা। তাই প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা আসছেন, খোঁজ নিচ্ছেন, অনেকে আবার ভর্তিও হচ্ছেন।

উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে আসা রাজধানীর ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী মারজান বিনতে মুরাদ জানান, অনেকদিন পড়ালেখার বাইরে ছিলাম। নিজেকে এখন একটু ঝালাই করে নিতে চাই। বাসায় একা একা পড়লেও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হয় না। এছাড়া উদ্ভাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে। তাদের সাথে পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের অবস্থান যাচাই করাও সম্ভব। তখন প্রস্তুতি নিতে আরও সুবিধা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ‘জুম’ ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করবে কোচিং সেন্টারগুলো। আর শিক্ষার্থীদের নোট পাঠানো হবে কুরিয়ারের মাধ্যমে। পরীক্ষার জন্যও একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম ব্যবহার করা হবে। এছাড়া অনলাইনে নেয়া প্রতিটি ক্লাসের রেকর্ড ইউটিউব কিংবা ফেসবুক গ্রুপে আপলোড করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা এই লেকচার পুনরায় দেখতে পারবে। প্রায় প্রতিটি কোচিং সেন্টারই ভর্তিতে ছাড় দিচ্ছে। এদের মধ্যে ইউনিএইড ভর্তিতে ৫০ শতাংশ, ইউসিসি ৩ হাজার, উদ্ভাস ৩ হাজার এবং ফোকাস কোচিং সেন্টার ভর্তিতে ৫ হাজার টাকা ছাড় দিচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেক শিক্ষার্থী বিনা খরচে ভর্তি প্রস্তুতির সুযোগও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

করোনার কারণে ভর্তি ফিতে ৫ হাজার টাকা ছাড়ের কথা বলা হলেও ২-৩ হাজার টাকাতেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফোকাস কোচিং সেন্টারের ফার্মগেট শাখার ম্যানেজার মো. হিমেল খন্দকার। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের ভর্তি ফি ১৬ হাজার টাকা। সেখান থেকে আমরা ৫ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছি। তবে অসচ্ছল কিন্তু মেধাবী এমন অনেক শিক্ষার্থীকে আমরা ২-৩ হাজার টাকা নিয়েও ভর্তি করিয়েছি। কেননা আমরা মানব সেবার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, ২৫ অক্টোবর থেকে আমাদের ক্লাস শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকবে।

ইউসিসি কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন পাটোওয়ারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিংয়ের ক্ষেত্রে ইউসিসি অনন্য। আমাদের এখানে যারা আসছেন তাদের যথাসাধ্য ছাড় দিয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ক্লাস অনলাইনে হলেও পড়ালেখার মানের ক্ষেত্রে কোনো কমতি রাখছি না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত গাইড করা, লেকচার, নোট প্রেরণ করা— সবকিছুই করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) থেকে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলেও জানান কামাল উদ্দিন পাটোওয়ারী।

শুধু করোনার সময়ই নয়; উদ্ভাস সব সময়ই আর্থিভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিউম্যান রিসোর্চ ও পাবলিক রিলেশন অফিসার আশরাফুর রহমান জানান, আমাদের ‘শিক্ষার্থী সহায়তা ফান্ড’ নামে একটি কার্যক্রম সারা বছর ধরেই চলমান থাকে। এর আওতায় আমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকি। করোনার কারণে এই সহযোগিতার পরিমান কয়েকগুন বেড়ে গেছে। আমরা লেকচার শিট কিংবা নোটের পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব সহায়ক বই সেগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে থাকি। এছাড়া জুম প্লাটফর্ম ও আমাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি। আর অনলাইনে নেয়া ক্লাসগুলোর রেকর্ডেড ভার্সন শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আপলোড করে রাখা হচ্ছে, যেন তারা পরবর্তীতে সেটি ব্যবহার করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ