০৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:৩৫

মৃত্যুদণ্ডের আইন কি বাংলাদেশে ধর্ষণ বন্ধের সমাধান?

ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদ  © সংগৃহীত

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে একজন গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং এই সময়ে আরও কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ দেশটির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও এই দাবি নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নয়। তারা বলছে, আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবনের যে সাজা এখন আছে, সেটারই প্রয়োগ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না এবং সেকারণে ধর্ষণ বা নারী নিপীড়ন উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে।

রাজপথের বিক্ষোভ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদে এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি তোলা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের বিচার না পাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরণের চরম হতাশা তৈরি হয়। এই আন্দোলনের মুখে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করার এই দাবি সরকার বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, জনগণের কাছ থেকেই তো দাবিটা উঠেছে। এখন এটাকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। এই দাবিটা বিবেচনা করবো। তার কারণ হচ্ছে, আমরা ধর্ষণ বন্ধ করার জন্য যা যা করনীয়, সেটা করার চেষ্টা আমরা করবো। এই দাবির প্রেক্ষিতে আমরা যেটা বিবেচনা করবো, সেটা হচ্ছে, আবারও এই আইনটা সংশোধন করে এটা আনা যায় কিনা?

মন্ত্রী বলেন, এই দাবির ভাল মন্দ দুই দিকই বিবেচনা করা হবে। সেজন্যই আমি বলেছি যে বিবেচনা করা হবে।

ধর্ষণ এবং নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে আন্দোলনকারিদের বক্তব্য হচ্ছে, এখন আইনে ধর্ষণের যে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা রয়েছে, তা অপরাধ দমনে কঠিন কোন বার্তা দিতে পারছে না। এছাড়া বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই সাজাও হয় না। সেজন্য তারা মৃত্যুদণ্ডের দাবিকে সামনে আনছেন।

ঢাকায় আন্দোলনকারী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একজন নেত্রী নাজিফা জান্নাত বলেছেন, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে অপরাধ কমতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করছেন।

তিনি বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়, এটা কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক নয়। কারণ আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যায়। কিছুদিন পরই তারা জেল থেকে বের হয়ে যায়। এটা যদি করা যায় যে, ধর্ষণ করলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। তখন হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হবে না। ধর্ষণ বা নিপীড়ণ হবে। কিন্তু এটার মাত্রাটা অনেক কমে আসবে।

কিন্তু মৃত্যুদণ্ড হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে- এমনটা মনে করে না মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

তারা মনে করে, আইনের প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন এবং নির্যাতিতা নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা- এই বিষয়গুলোতে বড় সমস্যা রয়েছে। সে কারণে ধর্ষণের অভিযোগ বিচারের পর্যায়ে যেতেই অনেক সময় লেগে যায়। আবার নিম্ন আদালতে বিচার হওয়ার পর উচ্চ আদালতে মামলার জটে পরে যাচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বলছেন, গত ১০ বছরে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনশ'র বেশি মামলায় নির্যাতিত নারীদের আইনী সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময়ের কারণে এখনকার শাস্তিই নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

নীনা গোস্বামী মনে করেন, শাস্তি যাই থাকুক- তা বাস্তবায়ন করাটাই বড় বিষয়। তিনি বলেন, এখন আইনে যে শাস্তি আছে, সেটাই যেনো নিশ্চিত হয় এবং বাস্তবায়ন হয়। সেটা দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি এটা বলতে চাচ্ছি, আমাদের অনেকগুলো মামলা শুনানির অপেক্ষায় আছে। যার জন্য কিন্তু রায়ের বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আমরা যে মামলাগুলো পরিচালনা করছি, সেগুলো থেকে আমাদের হাতে এখনও ২০১২ সালের বা ২০১৪ সালের মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোতে এখনও নিম্ন আদালতেও রায় হয়নি। নিম্ন আদালতে হলেও উচ্চ আদালতে গিয়েও অপেক্ষমান থাকতে হয়।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে আইন সংস্কারের ব্যাপারে যে জোট রয়েছে, তাদের পক্ষ থেকেও এখনকার আইন প্রয়োগের বিষয়কেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই জোটের একজন মানবাধিকার কর্মী বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান করাটাই সমাধান নয়।

মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে, নির্যাতিত নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া- এই বিষয়গুলোতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ চাইছেন।

মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে মানবাধিকার কর্মীদের যে প্রশ্ন রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথেও আলোচনা করা হবে। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]