একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাগুলোকেও মূল্যায়নের পরামর্শ
- ফরাজি এম ইসমাঈল
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৭:০৮ PM , আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৩২ PM
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভয়াবহ আক্রমণে গোটা বিশ্ব যেন একরকম স্থবির। এই মহামারীতে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হলেও একে একে বাতিল হয়ে যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষাগুলো। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা (জেএসসি) বাতিল করা হয়।
সেক্ষেত্রে জেএসসি এবং এসএসসিকে মানদণ্ড ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির স্কোরিং করা হবে। অর্থাৎ এই দুই পাবলিক পরীক্ষার নম্বরকে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। যদিও এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিকিয়া দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন আবার অনেকেই দেখছেন নেতিবাচকভাবে।
যে সকল শিক্ষার্থীর এর আগের দিই পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছেন তারা অনেকটাই আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা। আবার ফেলের হাত থেকে বাঁচতে পারায় এক রকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে এই শ্রেণির নেটিজেনদের মধ্যে।
অন্যদিকে, গত দুই পাবলিক পরীক্ষায় যাদের আশানুরূপ ফল হয়নি, শেষবারের মতো পাবলিক পরীক্ষায় পুরোদ্যমে পড়াশোনা করেছেন সেরাটা অর্জন করার জন্য- এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য হিতে বিপরীত হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনঃকষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে।
তবে কেবল জেএসসি এবং এসএসসিই নয় বরং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত পরীক্ষাগুলোকেও মূল্যায়নের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে উত্তরণের জন্য সকল পরীক্ষার ফলাফল সংরক্ষণেরও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ফলাফলের এ বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ করার পরামর্শ উঠে এসেছে। অন্যদিকে পরীক্ষা না নেয়ায় বিস্ময় রয়েছে শিক্ষাবিদদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রেখে স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চালুর পরামর্শও উঠে এসেছে শিক্ষাবিদদের মন্তব্যে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সব জিনিসেরই একটা ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক রয়েছে। করোনার মহাসঙ্কটকালে সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প ছিলো না। জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের সমন্বয় করে এইচএসসির ফলাফল দিবে। আমি মনে করি এটা ঠিকই আছে। তবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে তারা যে লেখাপড়া করেছে, সেখানে যে বিভিন্ন সময় পরীক্ষা হয়েছে তার ফলাফলগুলো যদি কিছুটা মূল্যায়নের মধ্যে নিয়ে আসা যেত তাহলে সমন্বয়টা আরো সুন্দর হতো।
ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কিন্তু আমি এটাও বুঝি যে সেখানে আমাদের সব শিক্ষার্থীদের একরকম মূল্যায়নে সেখানে নেয়নি। টেস্ট পরীক্ষা, প্রিটেস্ট পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা, শ্রেণিকক্ষের যে পরীক্ষাগুলো হয় সেগুলো একেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেকভাবে নিয়েছে। যদি তাদের মূল্যায়নের ওপর আস্থা রাখা যায়, তবে সেটাকেও একটা মূল্যায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা যায়।
এ প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু সরকার মনে করতে পারে যে এটার মধ্যে দীর্ঘসূত্রিতা এসে যাবে কারণ এসব ফলাফল বোর্ডের কাছে থাকে না। আগে থেকেই যদি এগুলো বোর্ডের কাছে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে সেক্ষেত্রে সুবিধা হতো।
এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে করণীয় ঠিক করার কথা জানিয়ে ঢাবির এই সাবেক অধ্যাপক বলেন, তবে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি এই করোনা সঙ্কট যদি আরো দীর্ঘদিন আমাদের মধ্যে থাকে, এবং আমাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যদি এভাবেই করতে হয় (পাবলিক পরীক্ষা ছাড়া), তবে আমি মনে করি এখন থেকেই বোর্ডগুলো সকল পরীক্ষার (প্রতিটি ষান্মাসিক পরীক্ষা, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা) এগুলোর ফলাফলও বোর্ডে সংরক্ষণ করবে। এগুলো কোনো বিষয়ই না। ডিজিটাল সিস্টেমে সব খালি পোস্ট করে দিবে বোার্ডের কাছে চলে যাবে ফলাফল সংরক্ষিত থাকবে। তারপর সমন্বয় করে মূল্যায়ন করা যেত। এর মাধ্যমে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফলেরও একটা মূল্যায়ন হতো।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির মানদণ্ডে সমন্বিত রেজাল্টের বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমার মনে এবার যেহেতু মূল্যায়নটা চেঞ্জ হয়ে গেল, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যখন তাদের ভর্তির নিয়ম-কানুনগুলো ঠিক করবে তখন নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করবে। আমার মনে হয় সেদিক থেকে অসুবিধা হওয়ার কথা না। করণে ছেলেমেয়েরা হয়তো কেউ জেএসসিতে খারাপ করেছে আবার এএসসিতে ভালো করেছে। কেউ এএসসিতে খারাপ করেছে জেএসসিতে ভালো করেছিল। এইচএসসি দিয়ে কেউ হয়তো আগের রেজাল্টের চেয়ে ভালো করতো, আবার কেউ হয়তো খারাপও করতো। এই ভালো-খারাপের বিষয়টা সবসময়ই অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকবে।
তিনি আরো বলেন, যেটা রেজাল্ট হয়ে গেছে সেগুলোর মূল্যায়ন করা ছাড়া তো কোনো বিকল্প নেই। ও লেভেল, এ লেভেলের পরীক্ষা সারা পৃথিবীতে মূল্যায়ন করে। তাদের এবারের পরীক্ষা না নিতে পেরে আগের পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন করে রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে। এটাই এখন একমাত্র বিকল্প হাতে ছিলো বলে আমি মনে করি।
তবে পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষা নেয়া যাবে না কেন- এই কথাটি আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। কারণ আমি তো আজকেও এনএসআই’র প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতের ক্লাস নিয়ে এলাম। আমি এখনো ক্লাস নিচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা করছি। লোকজন পাশাপাশি বসে আছে; কিন্তু মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। মাঝখানে তিন ফুট ব্যবধান রেখে পরীক্ষা, মাস্ক পরিধান করে পরীক্ষা নেয়া যাবে না কেন? মানুষ তো সবই করছে এখন। প্রধানমন্ত্রীও মিটিং করছেন না?
স্কুলগুলোতে ক্লাস শুরু করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রীতিমতো ক্লাস শুরু করে দেয়া দরকার। তবে স্কুলগুলোতে; বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলবে না। সেখানে আবাসিক সমস্যা রয়েছে। এটা আমার একটা বিনীত মন্তব্য।