‘ভ্যাকসিন আসার আগে স্কুল-কলেজ খোলা ঠিক হবে না’
কায়েশ ইসলাম ও ইশান ইসলাম দুই ভাই। তারা রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণি এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মা-বাবার সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে থাকে। তাদের মা জাকিয়া ইসলাম জুথী বলেন, ‘ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। করোনার কোনো ভ্যাকসিন এখনো আসেনি। এই অবস্থায় সরকার যদি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়, তবে ঠিক হবে না।’
সন্তানদের নিয়ে আতংকে দিন কাটছে মা জাকিয়ার। তিনি আরও বলেন, আগে করোনা পরিস্থিতি কেটে যাক, দেশে যদি ভ্যাকসিন আসে, তারপর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে।
শিহাব উদ্দীন এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ঘরবন্দি অবস্থায় স্থগিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) পরীক্ষা পিছিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ছন্দপতনও হয়েছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি অনুকূল পরিবেশে না আসা পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাই উত্তম। এতে অন্তত শিশু শিক্ষার্থীরা এখনও নিরাপদে আছে।
ঢাকা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী মা বলেন, আগে জীবন, তারপর পড়াশোনা। সন্তান বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলেই তো সে কলেজে যেতে পারবে। শিক্ষিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো অভিভাবকই চাইবে না যে তার সন্তান ঝুঁকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাক। পাঁচ মাস বন্ধে শিক্ষার্থীদের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। আরও কিছুদিন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না।
কিছুদিন আগে করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পরীক্ষামূলকভাবে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছিল। তখন দেশটিতে প্রায় এক লাখ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে। তাই শিক্ষপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে খুদে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধের এই ঘোষণা আছে। এমতাবস্থায় পড়াশোনা ভুলতে বসেছে দেশের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ‘ঘরে বসে শিখি’ নামে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার চালু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বেতারের মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান চালু রয়েছে।
আর দেশের বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরিসংখ্যানের চিত্র বিবেচনা করে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার আহবান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা।
তারা বলছেন, সরকার যদি পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক। করোনা মোকাবিলায় তাদের যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা রয়েছে। এরপর কলেজগুলো খোলা যেতে পারে। এই দুটো পর্য়ায়ে শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে করোনা আক্রান্ত বা শনাক্তের সংখ্যা নিম্নগামী হলে পরেই মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেখা যেতে পরে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলছেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দেবে। সংক্রমণ সামগ্রিকভাবে বহুগুনে বেড়ে যাবে। করোনাকালে দেশের স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আমাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ এখনও হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আপনারা জানেন দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি আপনারা সবাই অবহিত। উদ্ভুত পরিবেশ অনুকূলে এলেই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করবে জানান শিক্ষামন্ত্রী।