কালোবাজারি বন্ধে মাহবুব কবিরের আলোচিত সেই উদ্যোগ বাতিল

‘একটি কঠিন বিষয় সবাইকে মেনে নিতেই হবে। আপাতত এর কোনো বিকল্প নেই। ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ করতে চান? আবারও বলছি, এর কোনো বিকল্প নেই। হয়ত সব ট্রেনে এর সুফল পেতে কিছুটা দেরি হবে, কিন্তু নন স্টপ এবং আন্তঃনগর ট্রেনে তা কার্যকর হবেই। যদিও তা নির্ভর করছে আইনের কঠিন প্রয়োগের উপর। জগতের কোথাও একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারে না। যার নামের টিকিট, তাকেই ভ্রমণ করতে হবে।’

মাস তিনেক আগে এভাবেই নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এনআইডির মাধ্যমে রেলের টিকের বিক্রির কথা বলেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। তার আশা ছিল এতে টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ হবে।

বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে সেই উদ্যোগ বাতিল হয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বেশ কিছু নিয়ম।

তথ্যমতে, করোনার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন চালু করার সময় স্টেশনে টিকিট বিক্রির পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রির নিয়ম চালু করে। এতোদিন সেই নিয়মই বিদ্যমান ছিল। এরমেধ্য জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেলের টিকেট কেনার বিষয়টি সবচেয়ে আলোচিত হয়। এ নিয়ে সমালোচনা যেমন হয়, তেমনি হয় প্রশংসাও। যেখানে বলা হয়েছিল, একজন যাত্রীকে টিকেট কিনতে হলে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকেট কেনা যাবে না।

পরে সমালোচনার মুখে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ভ্রমণের বিষয়টি শিথিল করার বিষয়টি জানানো হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাত্রীগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাধ্যতামূলক জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদর্শন করার বিষয়টি শিথিল করা হলো এবং এক আইডি কার্ডে পরিবারের সর্বোচ্চ চার সদস্যের টিকেট ক্রয় ও ট্রেন ভ্রমণ করা যাবে।

এর আগে ১০ মে মাহবুব কবির তার ফেসবুকে লিখেছিলেন,  একটি কঠিন বিষয় সবাইকে মেনে নিতেই হবে। আপাতত এর কোন বিকল্প নেই। ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ করতে চান? আবারও বলছি, এর কোন বিকল্প নেই। হয়ত সব ট্রেনে এর সুফল পেতে কিছুটা দেরি হবে, কিন্তু নন স্টপ এবং আন্তঃনগর ট্রেনে তা কার্যকর হবেই। যদিও তা নির্ভর করছে আইনের কঠিন প্রয়োগের উপর।

জগতের কোথাও একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারে না। যার নামের টিকিট, তাকেই ভ্রমণ করতে হবে এবং অনবোর্ড মানে ট্রেনে তার পরিচয় বা আইডেন্টিটি শো করতেই হবে।

ভারতে আমাদের এক রেল ফ্যান দাদাকে জিজ্ঞাস করলাম, দাদা ইন্ডিয়ায় টিকিট কি হস্তান্তরযোগ্য? মানে একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারে?

তিনি সুন্দর উত্তর দিলেন। বললেন, ট্রেনে উঠে যাত্রী যদি তার "আধার কার্ড" (ইন্ডিয়ান আইডি কার্ড) দেখাতে না পারে এবং টিকিটে লিখা নামের সাথে আধার কার্ডের নাম না মিলে, তবে মাঝ রাতে, মাঝপথে কোন স্টেশনে আপনাকে পরিবার সমেত নামিয়ে দেয়া হবে।

এই হল ইন্ডিয়ান কাহিনী। তাঁদের আইনের কঠোর প্রয়োগ। সেখানে সব বয়সেই ছবি সহ আধার কার্ড দেয়া হয়। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের কি করতে হবে! কি চান কালোবাজারি বন্ধ হোক? অন্তত শুরুটা হোক?

তাই যদি হয়, তাহলে আমরা মানে রেল, নির্বাচন কমিশন এনআইডি সার্ভারের সাথে সংযুক্ত (হুক আপ) করতে হবে। আমি কথা বলেছি তাঁদের সাথে। কোন জটিলতা নেই, সামান্য প্রসেস। তাদের সার্ভারের মোট ক্ষমতার মাত্র ২০% এখন ব্যবহার হচ্ছে। ৮০% অব্যবহৃত। কাজেই লাখ লাখ হিট একসাথে হলেও সার্ভার হ্যাং হবে না।

এরজন্য প্রাথমিক একটা রেজিষ্ট্রেশন ফী দিতে হয়। এরপর প্রতি এক্ট্রি বা হিটে এক টাকা। সেটা রেল দেবে। সরকার তো না করেনি, বা বলেনি এর জন্য বাজেট দেয়া হবে না।

সবাইকে অনলাইনে আবার রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে এনআইডি নাম্বার দিয়ে। এনআইডি সার্ভার ভেরিফাই করে ওকে করলে আপনি একটা পিন নাম্বার (আইডেন্টিক্যাল) পাবেন। এটা দিয়েই আপনাকে টিকিট করতে হবে। সামান্য সময়ের মধ্যেই আপনার আইডি ভেরিফাই হয়ে যাবে।

১২ থেকে ১৮ বছরের নিচে যাদের এনআইডি নেই, তারা রেজিষ্ট্রেশন করবেন জন্ম সনদ দিয়ে। পিন নাম্বার পেলে তা হবে আপনার আইডি নাম্বার টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে।

এরপর হচ্ছে কঠিন অপশন। আপনাকে ট্রেনে এনআইডি বা জন্ম সনদের অরিজিনাল কপি দেখাতেই হবে। যদি না মেলে তবে আপনাকে জরিমানা দিতেই হবে। পারিবারিক ভ্রমণে যে কোন একজনের নামে টিকিট হবে এবং তাঁকে এনআইডি সাথে রাখতেই হবে। দেখাতে না পারলে টিকিটে যতজনের নাম আছে তত জনকেই জরিমানা গুনতে হবে।

"Xxxxxxx" বা "mmmmmmm" নামে কোন টিকিট ইস্যু করা যাবে না। রেল আইন, ১৮৯০ এর ১১৪ ধারায় টিকিট হস্তান্তর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমরা শুধু এই ধারার প্রয়োগ করব। এটা করতে পারলেই কালোবাজারি বন্ধ হয়ে যাবে। তারা কার টিকিট, কার নামে কিনে রাখবে!

জগতের সব দেশ পারলে আমরা কেন টিকিট হস্তান্তর বন্ধ করতে পারব না! আর ট্রেনে যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারলে অনলাইন কোটা বাড়ানো যাবে। এতে কাউন্টারের উপর চাপ কমে যাবে।

যদি সত্যি টিকিট কালোবাজারি বন্ধ চান, তবে এনআইডি কার্ড পকেটে রাখার অভ্যাস শুরু করুন। আর সেটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, তা আমরা দেখব।

একটা জিনিস মনে রাখবেন সবাই, ট্রেনে যাত্রাকালীন আইডেন্টিটি ভেরিফাই নিশ্চিত করতে না পারলে, অন্য যে ব্যবস্থাই গ্রহন করা হোক না কেন, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা কোনভাবেই সম্ভব নয় আপাতত।


সর্বশেষ সংবাদ